লালমনিরহাটে জাল দলিল তৈরির চক্রের মূলহোতাকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। গতকাল সকালে সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের মধুরাম গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি ওই গ্রামের মোছাব্বের আলীর ছেলে মহুবর রহমান।
তিনি একাধিক জমির দলিল জাল করার বিষয়টি সিআইডির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন সিআইডির লালমনিরহাট জেলা অফিসের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল হাই সরকার। সিআইডি ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, মুহুবর রহমান প্রতিবেশী তোফাজ্জল হোসেনের রেকর্ডভুক্ত সাড়ে তিন শতাংশ জমি গত বছর ২৬ নভেম্বরে অন লাইনে ১১০/৯৪ নম্বর দলিল মূলে সদর উপজেলা ভূমি অফিসে নিজের নামে খারিজের জন্য আবেদন করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তোফাজ্জল হোসেন ওই দলিলটির জাবেদা সাবরেজিস্টার অফিস হতে উত্তোলন করে দেখতে পান ওই দলিলটি মহুবর রহমানের নামের দলিল নয় বরং তা মো: জহর উদ্দিন নামে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়েছে। একইসঙ্গে তোফাজ্জল হোসেন দলিলের জাবেদা পর্যালোচনা করে দেখতে পান মহুবর রহমান দলিলটির নম্বর ব্যবহার করে জাল জালিয়াতি ও প্রতারণামূলকভাবে হুবহু আরেকটি দলিল তৈরি করে নামজারির জন্য আবেদন করেছেন। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় তোফাজ্জল হোসেন জাল দলিল তৈরির অভিযোগে গত রোববার লালমনিরহাট সদর থানায় একটি মামলা করে সিআইডির সহায়তা চান। বিষয়টি অনুসন্ধানে সিআইডির লালমনিরহাটের কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে মাঠে নামেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সকালে মহুবর রহমানকে তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে। এ সময় মহুবরের কাছ থেকে ওই জাল দলিলটি উদ্ধার করে সিআইডি। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে একাধিক জাল দলিল তৈরির বিষয়টি মহুবর স্বীকার করে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে জাল দলিলের মাধ্যমে মহুবর রহমান প্রতিবেশী মোহাম্মদ লিটন, লাভলু মিয়া, আব্দুস সালামসহ অনেকের জমি দখল করেছেন। মহুবর রহমানের দলিল জাল করার অপকর্মে কারণে অতিষ্ঠ এলাকার অনেকে।
প্রতিবেশী লাভলু মিয়া বলেন, আমার এবং আমার জ্যাঠাতো ভাইয়ের ৬১ শতাংশ জমি জাল দলিল দেখিয়ে নিজের নামে খারিজ করার আবেদন করেছিল। পরে এসিল্যান্ড জাল দলিলের বিষয়টি জানতে পেরে খারিজ আটকে দেয়। এরপর আবারও আমাদের আরো একটি জমি তার নামে খারিজ প্রক্রিয়ার শেষ ধাপে ধরা পড়ে যে, দলিলের নম্বর ঠিক থাকলেও দলিলটি মহুবরের না। পরে আমরা জানতে পেরে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
আরেক প্রতিবেশী আব্দুস সালাম বলেন, আমার পৈতৃক জমি জাল দলিল দেখিয়ে দখল করেছে মহুবর। আমার ছেলে সরকারি চাকরি করে বিধায় মামলা করতে নিষেধ করেছে। সেই জমি অবৈধভাবে ভোগ করে আসছে মহুবর রহমান। তার কারণে এলাকার অনেকেই অতিষ্ঠ। সিআইডির লালমনিরহাট অফিসের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল হাই সরকার বলেন, মহুবর রহমান একাধিক জাল দলিলের বিষয়টি স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে জাল দলিলের আরো একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
আমরা তাকে আটকের পর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জাল দলিলও উদ্ধার করেছি। আসামিকে এর মধ্যেই আদালতে প্রেরণ করেছি। এর সঙ্গে কারা জড়িত আছে তা জানতে আদালতের কাছে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।