পাঁচ দশ পয়সার মুদ্রা এখন দুর্লভ

লেনদেন না থাকায় চিনে না বর্তমান প্রজন্ম

প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এ. এইচ. এম. আরিফ, কুষ্টিয়া

সরকারি হিসাব মতে প্রচলন আছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো লেনদেন নেই। আর সচারচর লেনদেন না থাকায় পাঁচ, দশ, পঁচিশ ও পঞ্চাশ পয়সার মুদ্রা চিনে না কুষ্টিয়ার বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা। হাট-বাজারে কিংবা গ্রাম-শহরে এখন আর ব্যবহার হতে দেখা যায় না এসব মুদ্রা। কুষ্টিয়ার হাটবাজারেও নেই এসব মুদ্রার বিনিময়। এমনকি ভিক্ষুকরাও খুচরা পয়সা হিসেবে এসব মুদ্রার ভিক্ষা নেয় না। শুধু যে ব্যবহার নেই তা নয়, ক্রমেই দুর্লভ হয়ে উঠেছে এসব মুদ্রা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের একাধিক শিশু-কিশোরের কাছে জিজ্ঞেস করে জানা গেছে, তারা পাঁচণ্ডদশ বা পঁচিশ পয়সার মুদ্রা কখনো দেখেনি। শুধু বইয়ে পড়েছে আর ছবিতে দেখেছে। তাদের কেনাকাটায় এসব মুদ্রার কোনো প্রয়োজনও পড়ে না। তবে অল্প সংখ্যক শিশু-কিশোর পঁচিশ এবং পঞ্চাশ পয়সার মুদ্রা চিনলেও সেগুলো কেনাকাটায় তারা কোনো কাজে লাগাতে পারে না। অপরদিকে অভিভাবকরা জানিয়েছেন, শিশু-কিশোরদের পঁচিশ ও পঞ্চাশ পয়সার মুদ্রা দিলে তারা তা নিতে চায় না। অনেকেরই প্রশ্ন, এসব মুদ্রা গেল কোথায়? হাট-বাজারে কোথাও এসব মুদ্রার প্রচলন আর নেই। দোকানিরা জানান, এসব মুদ্রার প্রচলন না থাকার একমাত্র কারণ কেনাকাটার কোনো পর্যায়েই খুচরা পয়সার প্রয়োজন পড়ে না। এমনকি এক টাকার কয়েন দিয়েও এখন নিম্নমানের চকলেট ছাড়া আর কিছুই কিনতে পাওয়া যায় না। বর্তমানে হাট-বাজার কিংবা গ্রাম-শহরের ছোট্ট একটি দোকানে একটা পান কিনতেও প্রয়োজন হয় পাঁচ টাকার। বাজার মূল্যমান টাকায় পৌঁছানোয় মুদ্রা বা কয়েনের প্রচলন হ্রাস পেয়েছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির অসৎ খুচরা বিক্রেতারা এসব মুদ্রার পরিবর্তে মুদ্রামূল্যায়নে ব্যবহার করছে নিম্নমানের খাবার অযোগ্য চকলেট। এসব মুদ্রা থাকা সত্ত্বেও তা লেনদেন না করে সাধারণ ক্রেতাদের অনেকটা বাধ্য করছে চকলেট নিতে। ফলে একদিকে যেমন পাঁচ, দশ, পঁচিশ, পঞ্চাশ ও ১ টাকার মুদ্রার ব্যবহার উঠে যাচ্ছে। তেমনি অন্যদিকে খাবার অযোগ্য চকলেট বিক্রি করে প্রতিনিয়ত হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। কুষ্টিয়ার এই জনপদের হাট-বাজারে চালু মুদ্রাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলন রয়েছে দুই ও পাঁচ টাকার।

সরকারি নীতি ও নির্দেশ উপেক্ষা করে এভাবেই হাট-বাজারগুলোতে দিনের পর দিন এসব মুদ্রার ব্যবহার-বিনিময় বা প্রচলন বন্ধ হয়ে গেলে একদিন কালের আবর্তনে হারিয়ে যাবে এসব মুদ্রার পরিচয়। আজকের প্রজন্মের কাছে দেশের মুদ্রার আদি ইতিহাস ও মুদ্রা পরিচয় অধরায় রয়ে যাবে। তাই এসব মুদ্রার মান ও মুদ্রামূল্য অটুট রাখতে এখনই হাট-বাজারগুলোতে লেনদেনে করার প্রয়োজনী ব্যবস্থা নীতি চালু করতে হবে।