ফুল প্রকৃতির অলংকার। ফুল ফুটলে প্রকৃতি যেন নৈসর্গিক সৌন্দর্যে রূপান্তরিত হয়। এতে চারপাশের প্রকৃতি আমাদের মন ভালো করতে সহায়তা করে। এমনই এক মন ভোলানো ফুল রক্তজবা। বাংলা সাহিত্যেও স্থান করে নিয়েছে জবা ফুল। জবা নিয়ে রচিত হয়েছে কবিতা ও গান। ‘এই দেখ আমি উঠেছি ফুটিয়া উজলি পুষ্পসভা/ব্যথিত ধরার হৃদপি-টি আমি যে রক্তজবা’। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘জবা’ কবিতায় আমরা উপলব্ধি করি রক্তজবার সৌন্দর্য। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার পথের পাশে রক্তজবা গাছ রোপণ করে বাড়ির বেষ্টনী তৈরি করা বেড়ায় ও বিভিন্ন ফুল বাগানে প্রকৃতির অলংকার হয়ে ফুটে আছে লাল টুকটুকে রক্তজবা ফুল। রক্তজবায় প্রকৃতি যেন সেজেছে অনাবিল সৌন্দর্যে। জানা গেছে, জবার অনেকগুলো প্রজাতি রয়েছে। এদের মধ্যে রক্তজবা, ঝুমকাজবা, বহুদল জবা, জবা কুসুম, গোলাপি জবা ও মরিচা জবা উল্লেখযোগ্য। জবা ফুল আকারে বড় হয়। এ ফুল পঞ্চমুখী ও থোকা আকারের হয়ে থাকে। জবা মালভেসি গোত্রের অন্তর্গত চিরসবুজ পুষ্পধারী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস পূর্ব এশিয়াতে। জবা ফুলকে চীনা গোলাপও বলা হয়, যদিও এটি গোলাপ নয়। এর নানা রঙের ফুলের জন্য বাগানের শোভাবর্ধনে লাগানো হয়। কোথাও কোথাও বাড়ির চারপাশে এ গাছ লাগিয়ে বেষ্টনী তৈরি করা হয়। এছাড়াও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পুজোয় রক্তজবা ব্যবহার করে থাকে। সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন মেঠোপথ, বিভিন্ন সড়ক ও বাড়ির বেষ্টনী বেড়ায় লাল হয়ে ছেয়ে আছে টুকটুকে রক্তজবা ফুল। মুগ্ধতা ছড়ানো এসব ফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। মনজুড়ানো এসব রক্তজবায় দৃষ্টি আটকে যাচ্ছে পথচারীদের। নারীদের চুলের খোপা ও বেনিতে শোভা পাচ্ছে এ রক্তজবা ফুল। কেউ কেউ এ সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্দি করছেন মোবাইল ফোনে, আবার কেউ কেউ ফুটে থাকা এসব ফুলের সঙ্গে তুলছেন স্থির চিত্র। রক্তজবার টুকটুকে লালে প্রকৃতিতে যেন নতুন এক মাত্রা যোগ হয়েছে। জবা শুধু শোভাবর্ধনই করে না, এর রয়েছে ভেষজ গুণ। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় জবার ভূমিকা অপরিসীম। মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বলছে, চুল দীর্ঘ ও উজ্জ্বল করতে জবার কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। শরীরের ক্ষত নিরাময়ে জবা ব্যবহার করা হয়। জবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহবিরোধী ধর্ম থাকায় এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। জবা অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। স্থানীয় মোশাররফ হোসেন চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান আরশি বলেন, যে কোনো ফুলই মানুষকে আকৃষ্ট করে। তবে এ সময়টাতে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অহরহ চোখে পড়ছে টকটকে রক্তজবা। এ ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতিও যেন আরও সুন্দর হয়ে উঠেছে। আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে কয়েকটি প্রজাতির জবা রয়েছে। এরমধ্যে রক্তজবার সৌন্দর্য বেশি মন কাড়ে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা বলেন, এ সময়টাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফোটা নয়ন জুড়ানো রক্তজবার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন অনেকেই। তবে জবা শুধু সৌন্দর্যই বিলায় না, এর রয়েছে ভেষজগুণ। বিশেষ করে এ গাছের ফুল মানবদেহের নানা রোগে বহু আগে থেকেই ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জবার অনেকগুলো প্রজাতি রয়েছে।