শস্যভান্ডার খ্যাত উত্তরের বৃহৎ জেলা নওগাঁ। গত প্রায় এক থেকে বোরো ধান কাটা-মাড়াই চলছে। হাট-বাজারো ধান বিক্রি করছেন কৃষকরা। ধান হাটে উঠার পর থেকে দাম উঠা নামা করছে। তবে সরকার বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে হাটে অনেক কম দামে মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে। সরকার বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি করতে না পেরে হতাশ কৃষকরা। এতে করে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা। কৃষকরা বলছেন- সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে খোলাবাজারে অনেক কম মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ধানের দাম পেলেও ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হয় তাদের। বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছে তারা। কৃষকরা শ্রমে-ঘামে ধানের আবাদ করেছেন। তবে ফসল হাটে বিক্রি করতে গিয়ে ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষকদের মুখের হাসি মলিন হয়ে যাচ্ছে। কৃষকের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক আর নেই। হাটে মোটা জাত হাইব্রিড ধান ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খাটো-১০ জাত ১১০০ টাকা। তবে সরু বা চিকন ব্রি-৯০ জাতের ধান ১২৩০-১২৮০ টাকা, কাটারিভোগ ১২০০ টাকা ও সুভলতা ১১০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। সরকার মোটা জাতের ধানের দাম নির্ধারি করে দিয়েছে ১২৮০ টাকা মণ। সেখানে খোলা বাজারে সরু বা চিকন জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে সরকারি মূলে। আর মোটা ধান মণে প্রায় ২০০-২৫০ টাকা কমে। সরকারি মূল্যের চেয়ে খোলাবাজারে অনেক কম দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ধানের দাম পেলেও ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন- ধান রোপণ থেকে শুরু করে কাটা মাড়াই পর্যন্ত খরচ হয়েছে অন্তত ১৪-১৫ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি ফলন হচ্ছে ২২-২৪ মণ। মৌসুমের শুরুতে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা। এ বছর মৌসুমের শুরু থেকে তীব্র দাবদাহ ও খরা বইছে। প্রচণ্ড গরমে জমিতে ঠিকমতো পানি সেচ দেয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া পোকার উপদ্রব হয়েছে। এতে করে বিঘাপ্রতি ৩-৪ মণ ফলন কম হয়েছে। আবার বাজারে বিক্রি করতে এসে কম দামে দিতে হচ্ছে।
মহাদেবপুর উপজেলার তেরমাইল এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন- এ বছর আবহাওয়ার কারণে ধান উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি হয়েছে। আবার ধানের ফলনও কিছুটা কম হয়েছে। সরু জাতের ব্রি-৯০ ধান বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ টাকা মণ। যেখানে সরকার মোটা ধান ১২৮০ টাকা দাম বেঁধে দিয়েছে। এ ধান ১৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হলে কৃষকদের জন্য সুবিধা। কিন্তু আমাদের পক্ষে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
একই উপজেলার গাহলি গ্রামের কৃষক প্রেমানন্দ বলেন- আমরা হাটে ধান বিক্রি করতে এসে ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। সরকারি দামের চেয়ে মোটা ধান অনেক কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষকদের সুবিধার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করা প্রয়োজন। ধান ব্যবসায়ি জামান হোসেন বলেন- বিগত বছরে আমরা হাটে ধান কিছুটা বেশি কিনেত মজুত করতে পারতাম। এজন্য দাম কিছুটা বেশি ছিল। তবে এ বছর বেশি করে ধান কিনা সম্ভব হচ্ছে।
যে পরিমাণ ধান কি না হচ্ছে তা চাল উৎপাদনের জন্য চালকলে পাঠানো হচ্ছে। মজুতবিরোধ অভিযানের ভয়ে বেশি করে ধান কিনে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। যদি মজুত করা সম্ভব হতো তাহলে ধানের দাম আরো ১০০-১৫০ টাকা বাজার বেড়ে যাবে। নওগাঁ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন- কৃষকরা হাট-বাজারে যে ধান নিয়ে আসে তাতে, কিছুটা ভেঁজা, চিটা এবং ও ধুলা-বালু যুক্ত। ভেঁজা ধান কেনার পর শুকানো হলে ওজনে কমে যায়। আবার সংরক্ষণ করাও সম্ভব হয় না। সরকার মোটা ধান ১২৮০ টাকা মণ ঘোষণা করেছে। আমরা বাজার থেকে ধান কেনার পর দেখা যায় সরকারি মূল্যের কাছাকাছি চলে যায়। তাই বাধ্য হয়ে কম দামে কিনতে হয়। তবে সরকারি মূল্যে কেনা হলে পোশানো সম্ভব না। কারণ সরকারি গুদামে শুকনা ও ধুলা-বালু মুক্ত ধান দিতে হয়।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন- এ বছর জেলায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যেখানে প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৪৫ টন হিসেবে ফলন হচ্ছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।