কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ

১৬ বছরেও শেষ হয়নি আবারও কার্যাদেশ বাতিল

প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এনামুল হক, কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি

কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ ১৬ বছরে দুই দফায় কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। ১৭ বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। পরে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যার উন্নিত করার জন্য ভবন নির্মাণকাজ ২০০৮ সালে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর শুরু করেছিল। ১৬ বছর অতিবাহিত হলেও ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো। যে কারণে দুই দফায় কার্যাদেশ বাতিল করে নির্মাণকাজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

জানা যায়, প্রথম দফায় কার্যাদেশ বাতিলের পর গত ২৪ জুলাই, ২০২২ তারিখ মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজ দাদপুর লজ কাউনিয়া সদর, বরিশালের অনুকূলে এইচইডি প্রধান কার্যালয় হতে কাজের কার্যাদেশ প্রদান করা হয় এবং কাজ সমাপ্তির সময় ২৩ জুন ২০২৩ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। অথচ কার্যাদেশ প্রদানের ১০ মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ২ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়। যার ফলে গত ৩১ মে ২০২৩ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির উন্নয়ন কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করে তৎকালীন স্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জাকির হোসেন। কাজের সন্তোষজনক অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি ওই বছর ১ জুন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে কার্যাদেশ বাতিলের সুপারিশ করেন। এরপরে কাজটি পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী। এ সময় তিনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কিছু নির্দেশনা প্রদান করেন। পরবর্তী সময়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তার নির্দেশনা না মানায় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: সরোয়ার হোসাইন চৌধুরী স্মারক নং-৪৫.০২.০০০.০৯৩.০৫.০০১.২৩-৬৪৮-এর মাধ্যমে কাজের কার্যাদেশ বাতিল ঘোষণা করেন এবং নতুনভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করে প্রকৌশল অধিদপ্তর।

পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আদেশের বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ জারি করেন এবং আদালতে যাওয়ার কথা জানান। যার ফলে নতুন করে কোনো কার্যাদেশ দিতে পারছে না প্রকৌশল অধিদপ্তর। ফলে ভবনের কাজ থেমে পড়ে আছে। অপরদিকে ভবন সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছে লাখো মানুষ। জরুরিসেবা বিভাগ পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়েই চলছে। যেখানে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, উপজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির পুরান ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে ৩১ শয্যা থাকে ৫০ শয্যায় উন্নিতকরণের জন্য প্রথমে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কার্যাদেশ পেয়ে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল, বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূরই এন্টারপ্রাইজ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ২ বছর পর আংশিক কাজ করে বাকি কাজ ফেলে পালিয়ে যায়। ২০১৪ সালে ২৫ জুন কর্তৃপক্ষ মেসার্স নুরই এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করেন। এরপর দীর্ঘ ৮ বছর পর্যন্ত চিঠি চালাচালিতে সময় কেটে যায়। পরে কাউখালীবাসী বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, স্মারকলিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দেন-দরবার করার ফলে পুনরায় ২৪ জুলাই, ২০২২ তারিখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজ ৬ তলাবিশিষ্ট মূল ভবন ১০ ইউনিটের অত্যাধুনিক ডরমেটরি ভবন, সেবিকা কোয়াটার, গ্যারেজ, স্টোরসহ প্রয়োজনীয় সকল ভবন নির্মাণের জন্য ২৫ কোটি ১১ লাখ টাকা বরাদ্দের কার্যাদেশ পেয়ে নির্মাণকাজ শুরু করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ১ বছরের মধ্যে ভবনটি নির্মাণ করার কথা থাকলেও প্রায় ২ বছর শেষে মাত্র ১৬ শতাংশ কাজ করায় স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সরেজমিন পরিদর্শন করে কার্যাদেশ বাতিল করেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুজন সাহা বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন না থাকায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার হোসেন বলেন সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায় কাজের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ হয়েছে মাত্র ১৬ শতাংশ।

কাজের বিলম্ব ও ধীরগতির বিষয় স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে অবহিত করা হলে তিনি সরেজমিন পরিদর্শনের পরও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সন্তোষজন অগ্রগতি না হওয়ায় কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কর্তৃপক্ষ ফোন রিসিভ করেনি।