বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল দিনভর অবিরাম গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিসহ মৃদু বাতাস অব্যাহত রয়েছে বিভিন্ন জেলায়। এ ধরনের হঠাৎ বৃষ্টির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।
গাইবান্ধা : গতকাল সকাল বেলা থেকে এ জেলার আকাশ মেঘলা রয়েছে। বিকাল পর্যন্ত কোথাও সূর্য দেখা যায়নি। টানা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ছিল দিনব্যাপী। এর ফলে যারা জীবিকার তাগিদে বের হয়েছেন- তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। একই সঙ্গে স্থবির হয়েছে জনজীবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বৈরী আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে অনেকে ছাতা মাথায় নিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে দেখা গেছে। আবার অনেকে অলস সময় কাটাচ্ছেন।
নোয়াখালী : নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের শতাধিক ঘের ও পুকুর প্লাবিত হয়েছে। অনেকে ঘেরের পাড় মাটি দিয়ে উঁচু এবং জাল দিয়েও শেষ পর্যন্ত মাছ রক্ষা করতে পারেনি। চাষিরা দাবি করছেন, এতে কোটি টাকার অধিক মাছ জোয়ারে ভেসে গেছে। গত রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া জোয়ার শেষ হয় বিকাল ৪টায়। এতে পুরো নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। নিঝুমদ্বীপের চারপাশে নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১০ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : দমকা হাওয়া ও বৃষ্টির সাথে তিতাস ও মেঘনার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে জেলার বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। এছাড়া আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের পাশাপাশি বন্ধ ছিল পণ্য লোড-আনলোড কার্যক্রমও। তবে ঝড়-বৃষ্টিতে জেলার কোথাও তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া না গেলেও সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ১শ’ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর : তীব্র ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির কারণে প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি। ফলে সড়কগুলোও ছিল ফাঁকা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে জেলায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে ভারী বর্ষণ হয়। কমলনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ওমর ফারুক সাগর মুঠোফোনে জানান, দুপুরের পর থেকে নদীতে অস্বাভাবিক হারে জোয়ারের পানি বাড়ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বাড়ির আঙ্গিনায় প্রবেশ করেছে পানি। ঝড়ে অনেকগুলো ঘরও বিধ্বস্ত হয়েছে।
ঝিনাইদহ : গত রোববার বিকাল থেকে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝড়টি প্রভাব বিস্তার শুরু করে পুরো জেলাজুড়ে। রাত ১০টার পর থেকে থেমে থেমে দমকা বাতাসের সঙ্গে রাত ১টার পর থেকে শুরু হয় ব্যাপক বৃষ্টি।
মাগুরা : কৃষকের উঠতি ফসল তিল গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এতে ক্ষতির মধ্যে পড়েছে কৃষক। মধ্যরাত থেকে গাছে থাকা কৃষকের লিচুসহ ঘরবাড়ি, গাছপালা ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরেজমিনে মাগুরা সদর উপজেলা বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মাঠে থাকা তিল গাছগুলো বাতাসের তাণ্ডবে মাটিতে শুয়ে পড়েছে। গাছের গোড়ায় পানি জমে রয়েছে। কৃষকরা বলছেন বৃষ্টির পর রোদ উঠলে তিল গাছগুলো মারা যাবে। তেল জাতীয় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা।
ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) : বৃষ্টির পাশাপাশি দমকা হাওয়া বয়ে চলেছে। গতকাল ভোর থেকে শুরু হওয়া গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারি বৃষ্টিতে রূপ নিয়েছে, সঙ্গে বেড়েছে বাতাসের তীব্রতা। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বৃষ্টির কবলে পড়লেও বাতাসের তীব্রতায় তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি।
ফেনী : তীব্র বাতাসে নুইয়ে পড়ছে গাছপালা। গতকাল ভোররাত থেকেই এ অবস্থা শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ। এদিকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফেনী শহরের ট্রাংক রোড, মহিপাল ও সদর হাসপাতাল মোড় এলাকায় দেখা গেছে, এখানে থেমে থেমে আসা দমকা বাতাসের সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় যানবাহন কম দেখা গেছে। রাস্তায় সিএনজি বা রিকশার উপস্থিতিও অনেক কম।
মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) : ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে তছনছ হয়েছে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা। গত রোববার দিবাগত রাত ১২টা থেকে শুরু হওয়া ঝড়-বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কয়েক হাজার লোক সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। মধ্য রাতের জলোচ্ছ্বাসে ডুবেছে গোটা উপজেলা।
সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মোরেলগঞ্জ ফেরিঘাট থেকে বহুরবুনিয়া অভিমুখের রাস্তাটি সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পানিবন্দি হাজারও কর্মজীবী মানুষ।