ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

খামারেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে মিরকাদিমের ‘ধবল গাই’

খামারেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে মিরকাদিমের ‘ধবল গাই’

পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে এলেই পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের সামনে ভেসে ওঠে ধবধবে সাদা রঙের গরুর ছবি। কোরবানিতে তাদের মিরকাদিমের ধবল গাই যেন চাই-ই চাই। এজন্য একটা কথা প্রচলন আছে ‘পুরান ঢাকাইয়াদের কোরবানিতে চাই মিরকাদিমের ধবল গাই’। সরেজমিন মিরকাদিম পৌরসভার কাঠপট্টি, পশ্চিমপাড়া, এনায়েতনগর এলাকায় দেখা যায়, খামারে কোনোটিতে ১০টি আবার কোনোটিতে ৪০টি পর্যন্ত ধবল গরু পালন করা হচ্ছে। ধবধবে সাদা দেহে হালকা গোলাপি আভা। দুধে আলতা রূপে প্রতিটি গরুই দেখতে আকর্ষণীয়। একসময় বাড়িতে বাড়িতে ধবল গরু পালন করলেও বর্তমানে স্থান হয়েছে খামারে। পুরান ঢাকার মানুষের এ চাহিদা মেটাতে প্রতিবছর ধবল গরু পালন করেন মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমের মানুষ। এলাকটিতে ধবল গরু পালন ঐতিহ্য শতবছরের। মূলত সুন্দর গড়ন আর আঁশহীন নরমণ্ডসুস্বাদু মাংসের কারণে পুরান ঢাকাসহ দেশজুড়ে এর চাহিদা রয়েছে। আসন্ন ঈদ কেন্দ্র করে এবারও গরু পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। এবার বাড়তি চাহিদার কারণে হাটে তোলার আগে খামারেই গরু বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয়রা জানান, মিরকাদিমে ধবল গরু পালনের ঐতিহ্য প্রায় ২০০ বছরের। মাঝে বিলুপ্তির উপক্রম হলেও গত কয়েক বছরে আবারও বেড়েছে এসব গরু পালন। ব্যবসার পাশাপাশি শখের বশেও অনেকে পালন করছেন এ পশু। এসব গরু পালনের জন্য প্রথমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাসা, বুইট্টা জাতের বাছুর সংগ্রহ করা হয়। পরে উৎকৃষ্ট খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি বছরজুড়ে নেওয়া হয় বিশেষ যত্ন। এতে মাংস হয় নরম ও আঁশ হয় কম। এসব গরুর মূল ক্রেতা পুরান ঢাকার কোরবানি দাতারা। পৌরসভার কাঠপট্টি এলাকার মুজিবুর এগ্রোর ইমন ব্যাপারী বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে ধবল গরু পালন করা হয় আমাদের এখানে। প্রতিবছর কোরবানির ঈদের পর থেকেই দেশে বিভিন্ন স্থান থেকে ধবল গাই সংগ্রহ করা হয়। তবে আগের মতো অরিজিনাল মিরকাদিম ব্রিড পাওয়া বেশ মুশকিল। তারপরও আমরা সংগ্রহ করে ১ বছর ধরে লালন-পালন করি। কোনো আজেবাজে জিনিস খাওয়ানো হয় না। এক নম্বরের গম, ভুসি, স্থানীয় মিলের খৈল, খেসারির কুড়া খাওয়ানো হয়। প্রতিদিন ২-৩ বার গোসল করানো হয়। কোনো রকমের ময়লা গায়ে লাগতে দেওয়া হয় না। সুন্দর-পরিপাটি দেখে ঢাকাইয়ারা এসে প্রথম দেখায় পছন্দ করেন।’

খামারের কর্মচারী রাশেদ বলেন, ‘আমরা সন্তানের মতো করে একেকটি গরু প্রস্তুত করি। এখানে ৪০টির মতো ধবল গরু রয়েছে। ঢাকার ক্রেতারা দেখতে আসছেন, অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে। আশা করি এবার হাটে যেতে হবে না।’ মিরকাদিম পৌরসভার খামারি স্বপন জানান, এবার তার খামারে ১০-১২টি ধবল গরু আছে। আগে বাড়ি বাড়ি এ গরু পালন করা হতো। এখন পৌরসভা এলাকায় জনগণ বাড়ছে। এজন্য জায়গা কমে যাচ্ছে।

তাই গরু পালন অনেকে ছেড়ে দিচ্ছেন। এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোর্শেদ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, মিরকাদিমের ধবল গরুর জাত রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২ বছর ধরে দুটি সংস্থা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। আমাদের পক্ষ থেকেও গরু পালনকারীদের খাবার, পালন পদ্ধতি, চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত