ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সড়ক উন্নয়নের নামে গাছ কাটার মহোৎসব

সড়ক উন্নয়নের নামে গাছ কাটার মহোৎসব

কুঠারের বারংবার আঘাত পড়ছে রেইন্টি গাছের গোড়ায়। শ্রমিক কিছুটা জিরিয়ে নেয়ার পর আবারও কুঠারের আঘাত করছেন। কুঠার বৃক্ষকে যতটা না আঘাত করছে, তার চেয়ে বেশি মনে হচ্ছে পৃথিবীর বুকে আঘাত করছে। এসব গাছ কাটা হচ্ছে নওগাঁ শহরের বাইপাস বরুনকান্দি এলাকায়। আবার পাশেই চেইনসো স্টিল চেইন মেশিন দিয়ে গাছ কাটছেন শ্রমিকরা। সারা দেশে উন্নয়ন কাজের নামে কাটা হচ্ছে গাছ। বিশেষ করে সড়ক প্রশস্থকরণের নামে সড়কের দুইপাশে থাকা পুরোনো গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। এভাবে একের পর এক গাছ কাটার ফলে প্রকৃতিতে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। বাড়ছে খরাপ্রবণতা, নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। সারা বছরে এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও অনেক কম। বনহীন এ অঞ্চলে নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে জলাভূমির পরিমাণ। নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। এতে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে প্রকৃতি রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণসহ বেশি পরিমাণ গাছ লাগানো ও বন সৃষ্টির দাবি সচেতনদের। শহরের আব্দুল জলিল বাইপাস থেকে জেলার শেষ সীমানা বগুড়ার সান্তাহারের বশিপুর পার্ক পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়কের দুইপাশে রয়েছে শত শত রেইন্টি কড়ই, আম, মেহগুনি, শিশু ও ইউক্যালিপটাসসহ বনজ ও ঔষধি গাছ। এসব গাছের বয়স অন্তত ১৫-২০ বছর। এসব গাছ পথচারীদের ছায়া দেয়ার পাশাপাশি পরিবেশ শীতল রাখে। ক্লান্ত পথিক ও কৃষকরা গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেয়। সড়ক প্রশস্থকরণের নামে গত কয়েকদিন থেকে এসব কাটা হচ্ছে। আরো গাছ কাটা হয়েছে জেলার বদলগাছী, মহাদেবপুর, পত্নীতলা, ধামইরহাট ও পোরশা উপজেলায়। গত দুই বছরে সড়ক উন্নয়নের নামে হাজার হাজার গাছ কাটা হয়েছে। এতে করে সড়কের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে। সড়কের কাজ চলমান থাকায় এখন পর্যন্ত গাছের চারা রোপণ করা হয়নি। বরুনকান্দি এলাকার বাসিন্দা বয়জেষ্ঠ্য আফসার আলী বলেন- সড়কের দুইপাশে থাকা গাছগুলো ছায়া দিত। আমরা ক্লান্ত হওয়ার পর বিশ্রাম নিতাম। কিন্তু এখন সেই গাছগুলো সড়ক উন্নয়নের নামে কেটে ফেলা হচ্ছে। আবার কবে গাছ রোপণ করা হবে, কবে বড় হবে সেই অপেক্ষায় থাকতে হবে। গাছ কাটা শ্রমিকদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাসেল নামে একজন। তিনি নিজেকে ম্যানেজার বলে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, বগুড়াতে আমাদের মুলত ফার্নিচার (আসবাব) ব্যবসা রয়েছে। সড়কের গাছ যিনি টেন্ডার নিয়েছেন তার কাছ থেকে আমরা সাব টেন্ডার নিয়ে কাটছি। শহরের আব্দুল জলিল বাইপাস থেকে সান্তাহারের বশিপুর পার্ক পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে প্রায় ১২০০ গাছ কাটা হবে। নওগাঁ সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন- কৃষিকাজে পানি ভূগর্ভস্থের ৯০ শতাংশ, শিল্প ও কলকারখানায় ৬ শতাংশ এবং প্রাত্যহিক বা খাবার কাজে ৪ শতাংশ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কৃষিতে অতিরিক্ত যে পানি ব্যবহার হচ্ছে, তা কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে ব্যবহার করার অভ্যস্ত হতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার কমাতে হবে। দেশে যে পরিমাণ বনভূমি থাকার দরকার তা নেই। একটি দেশের জন্য বনভূমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশি বেশি বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নওগাঁর সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন- উন্নয়নের নামে নিধন হচ্ছে গাছ। যে পরিমাণ গাছ কাটা হচ্ছে, সে পরিমাণ রোপণ হচ্ছে না। ক্রমে পরিবেশ উত্তপ্ত হচ্ছে। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৪০-৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা বিরাজ করেছে। উন্নয়নেরও দরকার আছে। কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে উন্নয়ন সম্ভব না। নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রাশেদুল হক বলেন- শহরের বাইপাস সড়কে প্রায় ৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্থকরণ করার কার্যক্রম করা হচ্ছে। এতে সড়কের পাশে থাকা গাছগুলো কাটা পড়ছে। তবে গাছ কাটার জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। যে পরিমাণ গাছ কাটা পড়বে তার দ্বিগুণ পরিমাণ লাগানো হবে। বিশেষ করে ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত