ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বরগুনায় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা

বরগুনায় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা

উপকূলের মানুষের জীবনযাত্রা সবকিছু তছনছ করে দিয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। তবে এরকম ক্ষতে উপকূলবাসী অভ্যস্ত হলেও নতুন মাত্রা যোগ করে দিয়েছে রিমাল। এবার দেখা দিয়েছে লবণাক্ত এবং পানিবাহিত নানা রোগ। সরকারিভাবে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন। তবে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত এবং পরিবেশের ক্ষতি নিয়ে চিন্তিত তারা। এমনিতেই পাথরঘাটায় সুপেয় পানির সংকট থাকে সারা বছরই। এমন অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। রান্না-গোসলসহ বিভিন্ন কাজে সুপেয় পানি না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন উপকূলবাসী। এ বিষয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ এই পানিসহ ব্যবহার না করা, যদি করতেই হয় তাহলে পানি ব্যবহারযোগ্য করে ব্যবহার করা। এছাড়াও দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা, তা না করলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে প্রতিটি বসতবাড়িতেই যেন ধ্বংসস্তূপ। কোথাযও গাছ ভেঙে বসতঘরে পড়ে ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, কোথাও পুকুরে গাছের ডালপালা-পাতা পড়ে পানি নষ্ট হয়েছে। অপরদিকে পানিতে মাছ, হাঁস মুরগি, কোথাও কোথাও গরু-ছাগল পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। একে তো পরিবেশ দূষিত হয়েছে অন্যদিকে পানি পচে পানিবাহিত নানা রোগেরও সংক্রমণ তৈরি হয়েছে। পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমন কোনো পুকুর নেই যেখানে গাছ পড়েনি বা পানি নষ্ট হয়নি। এসব পানি ব্যবহার করাই দুষ্কর। রুহিতা গ্রামের জাকির মুন্সি, ইব্রাহিম সাওজাল বলেন, সত্য কথা বলতে তিনদিন গোসল করতে পারিনি আমরা। পুকুরের পানি কালা হয়ে গেছে, দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে। পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ রানা বলেন, একে তো লবণাক্ত পানি ঢুকেছে, অন্যদিকে গাছের পাতায় পানি পচে যাওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে। এই পানিসহ ব্যবহার না করাই উত্তম। যদি করতেই হয় তাহলে পানি ব্যবহারযোগ্য করে ব্যবহার করা। এছাড়াও দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা, তা না করলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে পারে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না করলে ভয়াবহ অবস্থা হবে। উপকূল অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, উপকূল যে প্রতিনিয়ত দুর্যোগে ক্ষতি সম্মুখীন হয় ঘূর্ণিঝড় রিমাল তার প্রমাণ। ২৬ থেকে ২৭ মে দুদিনের রিমালের থাবায় সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ছয় দিনেও পাথরঘাটার উপকূলের পানি নামেনি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে রিমালের পানি উপচে পড়ে ভেতরে পানি ঢুকলেও একাধিক জায়গায় খাল দখল হওয়ায় পানি নামতে পারছে না। ফলে এখনও নিমজ্জিত এলাকা। পাশাপাশি পানি দূষণের কারণে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না করলে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে, তাছাড়া পানিবাহিত নানা রোগসহ চর্মরোগে আক্রান্ত হবে। পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, রিমালে ঘরবাড়ি গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়, তারপরও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। তবে এ মুহূর্তে সবচেয়ে সংকটে পড়েছে সুপেয় পানি, বিকল্প হিসেবে পুকুরের পানি ফুটিয়ে পান করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, এরইমধ্যে প্রতি ইউনিয়ন পরিষদে পানি বিশুদ্ধ করার ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি পানি নিরাপদ করার জন্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত