ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শিলাবৃষ্টি ও খরায় লিচুর ফলন কম

বাগান কিনে লোকসানে ব্যবসায়ীরা
শিলাবৃষ্টি ও খরায় লিচুর ফলন কম

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলাকে বলা হয় লিচুর রাজধানী। এখানকার মোজাফফর জাতের লিচু আকারে বড় ও রসালো হওয়ায় দেশজুড়ে বেশ পরিচিত রয়েছে। কিন্তু এবার শিলাবৃষ্টি ও অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে লিচুর ফলন অর্ধেক নিচে নেমে এসেছে। এতে করে মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ীরা বাগান কিনে লোকসানের মুখে পড়েছেন। যেসব গাছে লিচুর ভারে গাছের ডাল ভেঙে পড়ত, সেই গাছগুলোতে এখন শুধু সবুজ পাতার দেখা মিলছে। অন্যান্যবার একেকটি লিচু গাছে ৫-৭ হাজার লিচুর ফলন হলেও এবার সেসব গাছে এক হাজার লিচুর দেখাও মিলেনি। সরেজমিন গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগানজুড়ে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ২-৪টি করে লিচুর ঝোঁপা দেখা মিলেছে। অনেক গাছে পাতা থাকলেও লিচুর দেখা মিলেনি। পুরো বাগানজুড়ে ১৫ থেকে ২০টি লিচু গাছ থাকলেও ৩ থেকে ৪টি গাছে অল্প পরিমাণে লিচু দেখা গেছে। অন্যদিকে, লিচুর ফুল দেখে মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ীরা লিচু বাগান কিনলেও শিলাবৃষ্টিতে ফল ঝড়ে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন তারা। অনেকে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাগান কিনলেও অর্ধেক দামেও বিক্রি করতে পারেননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ফলে লাখ লাখ টাকা লোকসানে পড়তে হয়েছে। তবে লিচুর ফলন কম হলেও লিচুর আকার বেশ বড় দেখা গেছে। শ্রমিকরা গাছ থেকে লিচু ভেঙে নিচে রাখছেন। আর গাছের নিচে বসে লিচু বাছাই ও আঁটি বাঁধার কাজ করছে শত শত নারী-পুরুষরা।

অন্যদিকে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর বটতলার লিচুর সবচেয়ে বড় আড়ত। উপজেলার প্রাঙ সিংহভাগ লিচু এ আড়তে আনা হয়। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাকযোগে ব্যবসায়ীরা লিচু সরবারহ করেন। অন্যান্যবার প্রতিদিন ৫০-৬০টি ট্রাকভর্তি লিচু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবারহ করা হতো। কিন্তু এবার প্রতিদিন ১০-১৫ ট্রাক লিচু কেনাবেচা হয়েছে। ৫০ গাছের লিচু বাগান কিনে লোকসানে পড়া আফজাল হোসেন বলেন, এবার লিচুর ফলন নেই। যে টাকার বাগান কিনেছি, তার অর্ধেক টাকাও উঠেনি। এ বছর শিলাবৃষ্টিতে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এবং খড়ায় আরও বেশি ক্ষতি হয়েছে। এবার আমরা বাগান ব্যবসায়ীরা পথে বসে গিয়েছি। গাছে যে ফল ছিল, তা খড়ায় পুড়ে গেছে। যা লিচু আছে তা গাছ থেকে পাড়তে শ্রমিক খরচের টাকাই উঠছে না। এতে করে বাগান কিনে লোকসানে পড়ে গেছি। ২ বিঘা জমির লিচুর বাগান কেনা আরিফুল ইসলাম বলেন, এ বছর লিচুর ফলন কম। শিলে সব লিচু ঝড়ে গেছে। এ বছর বহু টাকা লোকসানে রয়েছি। ঋণ নিয়ে বাগান কিনেছি। এ ঋণ কীভাবে শোধ করব তা নিয়ে চিন্তায় আছি। নাজিরপুরের আরেক ব্যবসায়ী হান্নান আলী বলেন, গত কয়েক বছরেও এমন ফলন দেখিনি আমরা। এ বছর শিলাবৃষ্টিতে আমাদের এলাকার সব লিচু শেষ। দুই-চারটা যাও লিচু আছে, তা খড়ায় পুড়ে গেছে। লিচুর বাজার দাম মোটামোটি ভালো থাকলেও ফলন না থাকায় লোকসানে পড়েছি আমরা। গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হারুনর রশিদ বলেন, এ বছর প্রথমে শিলাবৃষ্টিতে লিচুর ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে। এবং অতি খড়ার কারণে ফল নষ্ট হওয়ার কারণে এ বছর গুরুদাসপুরে লিচুর ফলন কম হয়েছে। উপজেলায় ৪১০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। ৮ দশমিক ৫০ মেট্রিকটন লিচুর ফলন হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত