পাবনায় চাহিদার দ্বিগুণ কোরবানির পশু প্রস্তুত

হাটে গোখাদ্যের চড়া দামের প্রভাব

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কাজী বাবলা, পাবনা

পাবনায় কোরবানির পশু প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। এবার জেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৪টি গবাদিপশু। এর মধ্যে গরু ১ লাখ ৯৩ হাজার ১০০টি, ছাগল ৩ লাখ ৬৬ হাজার ২০০, মহিষ ৮ হাজার ৩৪ ও ভেড়া ৬৬ হাজার ৯১৬টি রয়েছে। জেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ৮২৬টি। চাহিদার চেয়ে ৩ লাখেরও বেশি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। দেশের অন্যতম পশু উৎপাদনকারী এলাকা পাবনায় গোখাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় এবার লোকসানের আশঙ্কা করে খামারিরা বলছেন, গোখাদ্যের উচ্চমূল্যের প্রভাব পড়বে কোরবানির হাটে। এদিকে জেলার কোরবানির পশুর হাটে এখনো বেচা-বিক্রি পুরোদমে শুরু হয় নাই। খামারি ও ব্যবসায়ীরা জানান, এক বছর ধরে গোখাদ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দাম আরও বাড়ছে। ভুসি, কাঁচা ঘাস, খড়, খৈল, চিটাগুড়, ধানের কুড়া, খুদসহ সব ধরনের গোখাদ্যের দাম গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে।

পাবনার সবচেয়ে বড় পশুর হাট করমজা চতুরহাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গরুর সরবরাহ তুলনামূলকভাবে কম এবং দামও কিছুটা চড়া। গরুর ব্যাপারী রমজান প্রামানিক জানান, গোখাদ্যের অস্বাভাবিক দামের কারণে এবার খামারিদের গরু পালনের খরচ অনেক বেড়েছে। এ কারণে বেশি দাম চাইছেন। আবার বেশির ভাগ খামারি ও গরু পালনকারী কোরবানির সময় দাম আরও বাড়তে পারে এ ধারণা করে হাটে এখনই গরু আনছেন না। ফলে হাটে গরুর আমদানি কম। পাবনা সদর উপজেলার জালালপুর গ্রামের খামারি আমানত শেখ জানান, এবার তার খামারে ৩২টি গরু রয়েছে। এগুলোর ওজন প্রায় ২৫ থেকে ২৮ মণ। এর মধ্যে ‘পাঠান’ নামের ষাঁড়টি প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে শাহিওয়াল ও ব্রাহামাসহ তিনটি জাতের মধ্যে দেশসেরা হয়েছে। কিন্তু ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি। হাটে কমবেশি ক্রেতা সমাগম থাকলেও আশানুরূপ দাম বলছেন না কেউ। যে হারে গোখাদ্যের দাম বেড়েছে তাতে লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। বেড়া উপজেলার বনগ্রাম মহল্লার খামারি মাহফুজা খানম বলেন, ‘কোরবানির হাটকে সামনে রেখে চারটি ষাঁড় প্রস্তুত করেছি। একেকটির ওজন ২০ থেকে ২২ মণ। ১৬ লাখ টাকায় এগুলো বেচার ইচ্ছা আছে। অন্য বছরগুলোয় এ সময়ে বাড়ি (খামার) এসে দরদাম করলেও এবার ব্যাপারিরা খুব কম আসছেন।

শুনেছি, এবার গরু পালন (উৎপাদন) হয়েছে অনেক বেশি। তারপরও বেশি দামে গোখাদ্য খাইয়ে শেষ পর্যন্ত ন্যায্য দাম পাব কি না, চিন্তায় আছি।’ মৌসুমি পশু ব্যবসায়ীরা চিন্তায় রয়েছেন বলে জানান, আতাইকুলা গ্রামের পশু ব্যাপারি লোতমান হোসেন। তিনি বলেন, এবার তুলনামূলকভাবে গরুর সংখ্যা বেশি। তবে গোখাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে গরু পালনের খরচ বেড়েছে।

এবার কোরবানির পশু নিয়ে লোকসানের ভয়ে আছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। তিনি আরো জানান, পাবনার বিভিন্ন হাট থেকে কোরবানির পশু ক্রয় করে প্রতি বছর এ মৌসুমে প্রায় ১০০ গরু রাজধানি ঢাকার বিভিন্ন কোরবানির হাটে নিয়ে বিক্রি করেন। কিন্তু এবার বাজার অনিশ্চিত এবং গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় ২০ থেকে ২৫টি গরু ঢাকায় পাঠানোর চিন্তা করছেন তিনি। এদিকে পাবনা জেলার কোরবানির পশুর হাটে এখনো বেচা-বিত্রি পুরোদমে শুরু হয় নাই। তবে ক্রেতা ও ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, জেলার বিভিন্ন পশুর হাটে তুলনামূলক চড়া দামে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। অনেক ব্যাপারি বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কিনতে শুরু করেছেন। তারা পশুর হাটগুলো থেকেও গরু কিনছেন। মৌসুমি ব্যাপারিরা এসব গরু কিনছেন মূলত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের কোরবানির হাটে বেশি দামে বিক্রির আশায়। বাড়ি ও খামারে ঘুরে গরু কেনা ব্যবসায়ীরা জানান, বেশি দামে গোখাদ্য কিনে খাওয়ানোর ফলে খামারিরা গরুর দাম বেশি চাচ্ছেন। এতে করে আগে তারা বেশি পশু ক্রয় করলেও এবার কম ক্রয় করতে হচ্ছে। কারণ দাম বেশি হওয়ায় গরুর বাজার আঁচ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে লোকসানের ভয়ও রয়েছে।

পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গৌরাংগ কুমার তালুকদার জানান, চাহিদার তুলনায় জেলায় এবার দ্বিগুণ কোরবানি পশু প্রস্তুত রয়েছে। অতিরিক্ত পশুগুলো দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদাও কিছুটা মেটানো সম্ভব হবে। পশুপালনে ব্যয় ও দামের ব্যাপারে তিনি বলেন, শুরু থেকেই এবার গোখাদ্যের দাম কিছুটা বেশি। এর ফলে পশু পালনে খামারিদের ব্যয়ও বেড়েছে। সেদিক থেকে ন্যায্যমূল্য না পেলে তারা লোকসানে পড়বেন। তিনি আরো জানান, জেলায় এবার কোরবানির গবাদিপশুর সংখ্যা ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৪টি। এর মধ্যে গরুর সংখ্যা ১ লাখ ৯৩ হাজার ১০০টি। এছাড়া ছাগল ৩ লাখ ৬৬ হাজার ২০০, মহিষ ৮ হাজার ৩৪ ও ভেড়া ৬৬ হাজার ৯১৬টি। জেলায় এবার কোরবানিতে চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ৮২৬টি। উদ্বৃত্ত রয়েছে ৩ লাখেরও বেশি গবাদিপশু।