ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লক্ষ্মীপুরে সড়ক সম্প্রসারণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ

লক্ষ্মীপুরে সড়ক সম্প্রসারণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ

লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৬৭ হাজার ৬৬৭ টাকার কাজে ব্যাপক অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার ইস্কান্দার মির্জা ও শামীমের বিরুদ্ধে। সওজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে অতি নিম্নমানের কাজ করে যাচ্ছে এ ঠিকাদার। শহর সংযোগ বাজারের দুইপাশে ৬ ফুট করে ১২ ফুট ড্রেন নির্মাণে স্থানে ৩ ফুট করে ৬ ফুটের কাজ চলমান রেখেছে সড়ক বিভাগ। ইলিশ চত্বর থেকে চিটি হাসপাতাল পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে কোনো ড্রেন নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। আঁকা বাঁকা করে ড্রেন নির্মাণের স্বজনপ্রীতি করারও অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। রাস্তা প্রশস্তকরণের ৮০ শতাংশ পাথর ২০ শতাংশ বালু ধরা থাকলেও ৬০ শতাংশ পাথর ৪০ শতাংশ বালু দিয়ে মেকাডম তৈরি করেন ঠিকাদার। পাথর এবং বালু দিয়ে সাবগ্রেড তৈরি করার ৪৫ দিন শেষ না হতে ৮ দিনের মাথায় তড়িগড়ি করে রাতের আঁধারে প্রাইম কোট দিয়ে ৪৮ ঘণ্টা না যেতেই ৭ ঘণ্টার মাথায় কার্পিটিং-এর কাজ শুরু করে ঠিকাদার শামীম। তবে সাবগ্রড ১২ ইঞ্চি ধরা থাকলেও তা করেনি ঠিকাদার এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। খবর পেয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা ছুটে আসলে ঠিকাদার ও সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে পালিয়ে যায়। এখানেই শেষ নয়। এস্টিমেট অনুযায়ী কার্পিটিং করার কথা ৫.২ ইঞ্চি, সেখানে করেছে ৩-৪ ইঞ্চি এমন অভিযোগ করেন পথচারী রহিম। রাস্তা প্রশস্তকরণে কথা ছিল ৩৬ ফুট, সেখানে কোথাও করা হচ্ছে ৩১ কোনো জয়গায় ৩২, ৩৩, ৩৫ ফুট, এমন অভিযোগ করেন সচেতন মহল রিয়াদ হোসেন। সড়ক জনপদ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে রাস্তার উপরে ড্রেন নির্মাণ করারও অভিযোগ রয়েছে। ড্রেনের ভেতরে বিদ্যুৎতের খুঁটি রেখে কাজ চলমান রেখেছে। এতে ড্রেনের ভেতর দিয়ে পানি চলাচলের বাধাগ্রস্ত হবে। নতুন ড্রেন নির্মাণ না করে পুরাতন ড্রেনের ২০ ফুটের মতো নতুন ড্রেনের সংযোজন করে দেয়ার অভিযোগ করেন তমিজ উদদীন বাড়ির স্থানীয় বাসিন্দারা। ঠিকাদার তার নিজ ক্ষমতাবলে এস্টিমিট ছাড়া কাজ চালিয়ে যাওয়ারও জনশ্রুতি রয়েছে।

আব্দুল রহমান নামে এক ট্রাক ড্রাইভার বলেন, চসার ড্রেন, গাইড ওয়াল ড্রেন, গাইড পোস্ট নির্মাণে নিম্নমানের ইটের কণা-বালু দিয়ে কাজ শেষ করে ঠিকাদার ও সড়ক বিভাগ। যার থিকনেস ঠিক নেই। আস্তর উঠে যাচ্ছে এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। কাজের মান নিয়ে এলাকাবাসী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। লক্ষ্মীপুর ইলিশ চত্বর থেকে রামগতি স্টেশনের মনামাস্টার দরজা পর্যন্ত। নয়-ছয় করে নির্মাণ কাজটি শেষ করে ঠিকাদার শামীম। নির্মাণ কাজ চলমান অবস্থায় প্রকল্পের বোর্ড ব্যবহার করা হয়নি। পথচারী ও যানবাহন চলাচলের নির্মাণ কাজ চলছে নিরাপত্তাজনিত সিগনাল বোর্ড ব্যবহারের চোখে পড়েনি। লক্ষ্মীপুর শহর সংযোগ দক্ষিণ তেমুহনী থেকে উত্তর তেমুহনী ও ঝুমুর এলাকায় ইলিশ চত্বর থেকে রামগতি স্টেশনের মনামাস্টার এলাকায় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণের শুরু ২০২০ সালে। যার বরাদ্দ ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। প্রকল্পের নাম লক্ষ্মীপুর শহর সংযোগ সড়ক প্রকল্পের নির্মাণ কাজটি পেয়েছেন এম এম বিল্ডার্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড- মেসার্স সালেহ আহমেদ জেবি থেকে নির্মাণ কাজটি ক্রয় করে নেয়। ওবায়দুল কাদেরের ভাগিনা নামে পরিচয়দান কারী ইস্কান্দর মির্জা শামীম। ২০২১ সালে নির্মাণ কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও ৩ বারে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। ২০২৪ সালেও এ সময় পর্যন্ত নির্মাণ কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারেনি ঠিকাদার ও সড়ক বিভাগ। এতে পথচারী ও যানবাহনের চলাচলের ভোগান্তিরও শেষ নেই এমন দাবি করেন লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ ছাত্র আনিসুর রহমান। এদিকে ভূমি অধিগ্রহণে স্বজনপ্রীতি করার অভিযোগ রয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিনে বিরুদ্ধে এমন প্রমাণ রযেছে, বাজারের একাধিক স্থানে জেলা প্রশাসন কর্তৃক লাল দাগ দেওয়া চিহ্নিত অনেক স্থানগুলো উচ্ছেদ করেনি সড়ক বিভাগ। সরেজমিন এনামুল হোসেন বলেন, এই রাস্তায় যে পরিমাণ নিম্নমানের কাজ হচ্ছে তা এর আগে কখনো দেখিনি। অপরদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ইস্কান্দার মির্জা শামিম বলেন, প্রাক্কলনটি ছিল ২০১৮ সালের। তখনকার মালামালের মূল্য ছিল কম। জমি অধিগ্রহণে ২ বছর চলে যায়। এরই মধ্যে মালামালের দাম বেড়ে গেলে কাজে অনাগ্রহ প্রকাশ করি। এরপরও কর্তৃপক্ষের অনুরোধে কাজ শুরু করি। কাজ করতে গিয়ে আমাকে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। এতে কাজটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলি। পরে জেলা প্রশাসন ও সওজ বিভাগের অনুরোধে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এ কাজে আমার লোকসান হবে। সহকারী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন নির্মাণ কাজের তদারকি করার কথা থাকলেও প্রাইম কোট দেয়ার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন না। লক্ষ্মীপুর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রাইম কোট দেয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর কার্পিটিং করার কথা! কিন্তু ঠিকাদার যদি না করে থাকে, তাহলে কাজটি করা সঠিক হয়নি। এসব অনিয়মের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, নির্মাণ কাজটি কিছু ক্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে, বেশি চাপাচাপি করলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজটি অসমাপ্ত রেখে পালিয়ে যাবে। জুন মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজটি শেষ করতে হবে। এ বিষয়ে লক্ষীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, সিডিউল অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ আদায় করে নেব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত