শরীরজুড়ে ডোরাকাটা দাগ থাকলেও নাম রাখা হয়েছে ‘টানেল’। আনুমানিক ৬ ফুট উচ্চতার টানেলের দাম হাঁকা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার খামারি আনসারুল হক সুমনের এলএন অ্যাগ্রো খামারেই বেড়ে উঠেছে টানেল, লাল মানিক, রিমালসহ ১৮টি বড় সাইজের গরু। যার প্রতিটির দাম পড়বে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক দেশি গরু। পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কোনো প্রকার ক্ষতিকর ইনজেকশন ও ট্যাবলেট ব্যবহার না করে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন সুমনসহ এখানকার খামারিরা। সবুজ ঘাস-খড়ের পাশাপাশি খৈল, ছোলা ও ভুসি খাওয়ানোর মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করছেন তারা।
পশু বিক্রির সময় ঘনিয়ে আসায়, দিনরাত কাজ করছেন তারা। বেশি লাভের আশায় পরম যত্নে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন খামারিরা। দেশীয় গরুর ব্যাপক চাহিদা থাকায়, ঈদকে সামনে রেখে ছোট-বড় খামারের পাশাপাশি গরু মোটাতাজাকরণ করছেন অনেক কৃষকও। খামারিরা জানান, কোরবানিতে ভালো দাম পাওয়ার আশায় এখন থেকে গরুকে ভালোভাবে যত্ন করে যাচ্ছেন তারা। বিগত বছরে লাভের আশায় গরু পালন করলেও, বাজারে ভারতীয় গরু বেশি থাকায় লোকসানের মুখে পড়েন বলে অভিযোগ খামারিদের। তবে এ বছর ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ থাকলে লাভবান হবেন বলে জানান তারা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারায় কোরবানি পশুর চাহিদা রয়েছে ৫০ হাজার। এছাড়া কোরবানি পশুর বাজারগুলোতে চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের উপজেলা থেকে লোকজন পশু কিনতে আনোয়ারার হাটবাজারে আসে।
এসব পশুর চাহিদা মেটাতে উপজেলায় ছোট-বড় ৬৩টি গরুর খামার রয়েছে। এসব খামার থেকে ৩২ হাজার কোরবানি পশু পাওয়া যাবে। এছাড়া কোরবানি উপলক্ষ্যে গরু ব্যাপারীরা আরও ৫০ থেকে ৬০টি মৌসুমি খামার করে। কৃষকরা বাড়িঘরেও গরু, ছাগল, মহিষ পালন করে। সব মিলিয়ে কোরবানির পশুর কোনো সমস্যা হবে না আনোয়ারায়।
বারখাইন ইউনিয়নের খামারি আনসারুল হক সুমন বলেন, বিগত ১০ বছর ধরে কোরবানির গরু মোটাতাজাকরণ করে আসছি। এ বছর গো খাদ্যের দাম বেশি, তাই পশু পালনে খরচও বেশি পড়ছে। আমার খামারে ১৮টি বড় গরুসহ অর্ধশতাধিক গরু রয়েছে। আমি দেশীয় খাবার ছাড়া অন্য কিছু খাবার দেই না। প্রতিবছর খামার থেকেই আমার গরু নিয়ে যায় ক্রেতারা। খামারের পাশাপাশি দেশী মুরগি, কবুতর, মাছ, বিভিন্ন প্রজাতির ফলের বাগানও রয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সমরঞ্জন বড়ুয়া জানান, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে গো-খাদ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে খামারিরা কিছুটা সমস্যায় ছিল। আমরা খামারগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করেছি। উপজেলার চাহিদার চেয়েও বেশি পশুর ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে এই উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য উপজেলায় পাঠানো যাবে।’