কেশবপুরে আধিপত্য বিস্তারে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)

যশোরের কেশবপুরে আধিপত্য বিস্তারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। মাদকে জড়িয়ে পড়েছে কিশোর গ্যাং। কেশবপুর পৌর শহরে দিন দিন কিশোর গ্যাং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মারামারি, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, মাছের ঘের ও জমি দখল, সিনিয়র, জুনিয়র দ্বন্দ্ব, প্রেমের বিরোধসহ বিভিন্ন অপরাধে কিশোর ও তরুণরা জড়িয়ে পড়েছে। এছাড়াও মাদক ব্যবসা ও দখলবাজিতেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। অধিকাংশ কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার পেছনে বর্তমানে দলছুট স্থানীয় হাতে গোনা কয়েকজন নেতাকর্মীরা মদদ দিচ্ছে। তাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তার করতে পৌর শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় কিশোর ও তরুণদের নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন বাহিনী। যার কারণে উঠতি বয়সের তরুণ ও কিশোররা নানা অপরাধে জড়িয়ে ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। সম্প্রতি কেশবপুর উপজেলার ত্রিমোহিনী মোড়, স্বর্ণপট্টি, পাবলিক ময়দান ও বায়সা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকটি মারামারির ঘটনা বিশ্লেষণ করে জানা যায়, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় দলছুট কতিপয় নেতাকর্মীরা। আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার প্রভাব ধরে রাখতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি কেশবপুর শহরের সার্বজনীন কালীমন্দিরে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। তারা ক্লাস সেভেনে পড়া ছেলেদের নিয়ে রাজনীতির নামে যে লেখা খেলছে। কেশবপুর উপজেলার সাধারণ জনগণের মাঝে সেটা ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। সে কারণে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন মহল। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কেশবপুর পৌর শহর এলাকাসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামেও এর ভয়াবহতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। উঠতি বয়সি যুবক, কিশোর গ্যাং জড়িয়ে পড়ছে মাদকের সঙ্গে। এর মধ্যে পৌরসভার ব্রহ্মকাটি, বালিয়াডাঙ্গা, মধ্যকুল, ভোগতি, বায়সা, বাজিতপুর, সাবদিয়া, হাবাপোল, রামচন্দ্রপুর, আলতাপোল এলাকাসহ ত্রিমোহিনী, সাগরদাঁড়ি, মজিদপুর, বিদ্যানন্দকাটি, মঙ্গলকোট, কেশবপুর সদর, পাঁজিয়া, সুফলাকাটি, গৌরিঘোনা, সাতবাড়িয়া ও হাসানপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পটে প্রতিনিয়ত স্থানীয় কিশোর গ্যাং এসে মাদক সেবন এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে চালিয়ে যাচ্ছে বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। সন্ত্রাসী, নিরব চাঁদাবাজি, মাছের ঘের ও জমি দখলের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম রায় বলেন, প্রতিনিয়ত পৌর এলাকাসহ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন মাদক স্পটে মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এলাকায় মাদকদ্রব্য বিকিকিনি বৃদ্ধি পাওয়ায় সচেতন মহল বিস্ময় প্রকাশ করেছে। কিশোর গ্যাং মাদকে জড়িয়ে এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এরা দলছুট নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকে। প্রশাসন কঠোর না হলে কেশবপুরবাসীর ব্যাপক ক্ষতি হবে। বেপরোয়া কিশোর গ্যাংদের দমনে প্রশাসনকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেশবপুর উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। উপজেলা নাগরিক সমাজের আহবায়ক অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা সব সময় মাদককে না বলি।’ যদি এদের রুখে দেওয়া না যায়, তাহলে কিশোর গ্যাং আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। এরা বেশিরভাগ শহরের বিভিন্ন মার্কেটে ওঠাবসা করে থাকে। সেখানে মাদক ব্যবসা ও সেবন করে এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। গত ৮ মে গভীর রাতে কেশবপুর শহরের সার্বজনীন কালী মন্দির ২০ ভরি স্বর্ণ ও ১২ ভরি রুপার গহনাসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এই চুরির ঘটনার সাথে কিশোর গ্যাং জড়িত থাকতে পারে। যার কারণে কেশবপুর উপজেলাবাসীকে বাঁচানোর লক্ষ্যে কিশোর গ্যাংসহ এদের গডফাদাদের আইনের আওতায় আনার জন্য কঠোরভাবে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করেছেন। কেশবপুর পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল ইসলাম মোড়ল বলেন, দিন দিন কেশবপুরে কিশোর গ্যাং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ বাহিনী কাউকে সম্মানও করে না। তারা দলছুট নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় রয়েছে। এরা মাদক ব্যবসা ও সেবনসহ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমি ও মাছের ঘের দখল, চুরি, ছিনতাইয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। তিনি কেশবপুর মডেল পৌরসভা গড়ার লক্ষ্যে কিশোর গ্যাংদের দমনে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার দাবি জানিয়েছেন। নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজ বলেন, কেশবপুরে দলছুট নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় থাকা কিশোর গ্যাং আধিপত্য বিস্তারেরর লক্ষ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এরা মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, দখলবাজ, চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। কেশবপুর মডেল উপজেলা গড়ার লক্ষ্যে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং, মাদক, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দখলবাজদের নির্মূল করার জন্য প্রশাসনকে সাথে নিয়ে যেখানে যা প্রয়োজন, সেখানে তাই ব্যবহার করা হবে। এদের কোনো দল নেই। এ ব্যাপারে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহিরুল আলম বলেন, কিশোর গ্যাংদের তালিকা তৈরি রয়েছে। তালিকা অনুযায়ী কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদের সাথে কোনো আপস নেই।