সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় ভুট্টা চাষিরা

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

গেল বছর ভুট্টার ভালো ফলন হয়েছিল। এর সাথে ভালো দাম পেয়ে খুশি ছিলেন কৃষকরা। তবে এবার ফলন ও দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের কৃষক। অল্পসংখ্যক কৃষক মাড়াই শুরুর কয়েক দিন দাম ভালো পেলেও এখন দাম কমায় চরম দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। এবার ফলন কমার সঙ্গে তেল, সার, কীটনাশক, সেচ ও জমির বর্গা খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। পৌরশহরের নয়াপাড়ার এলাকার কৃষক জয়নাল বলেন, দুই ফসলি জমিতে ধান না দিয়ে এবার তিনি সাত বিঘা ভুট্টা চাষাবাদ করেছিলেন। যেখানে প্রতিবিঘা ৫০ থেকে ৫৫ মণ ভুট্টা ফলন হওয়া কথা সেখানে তিনি পেয়েছেন ৪০ মণ। চাষাবাদ থেকে শুরু করে কাঁচা ভুট্টা বিক্রির আগ পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে তার ২৮-৩০ হাজার টাকা। কাঁচা ভুট্টা বাজারে বিক্রি করে চাষাবাদের খরচ ওঠাই দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। গত মৌসুমে ভুট্টা জমি থেকে তুলেই ১ হাজার ৫০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। অথচ এবার ৮০০ টাকার বেশি কেউ নিচ্ছে না। তাই সরকারিভাবে ভুট্টা কেনার দাবি জানান তিনি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এ বছর ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। ভুট্টার আবাদ বাড়াতে সরকার কিছু ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও বীজ দিয়েছে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ১০০ টন। কিছু কৃষকদের অভিযোগ, বিভিন্ন কোম্পানির চটকদার বিজ্ঞাপনের কারণে না বুঝে ভেজাল বীজ ক্রয় করে বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। আবার অনেকে ফলন কমের সঙ্গে বৈরী আবহাওয়ারকেও দুষছেন। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের বেঁধে দেওয়া কম দামে ভুট্টা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। তাই সব মিলিয়ে ভালো দাম না পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি নেই। উপজেলার আরেক ভূট্টা চাষি সাব্বির হোসেন জানান, এবার তিনি প্রায় ১৮ একর অর্থাৎ ৫৩ বিঘা জমিতে ভূট্টা চাষাবাদ করেছেন। তার মধ্যে ১৭ বিঘা এক ফসলি আর ৩৬ বিঘা দুই ফসলি। এক ফসলি জমিতে খরচ কম ফলন বেশি হয়েছে আর দুই ফসলি জমিতে খরচ বেশি ফলন কম হয়েছে। এদিকে লাগানো থেকে শুরু করে ভুট্টা ওঠা পর্যন্ত ছয় মাস সময় লাগে, বিঘাপ্রতি খরচ হয় ২৬ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সেই তুলনায় এবার ভুট্টার দাম হতাশাজনক। দাম কমের কারণ প্রসঙ্গ উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুজ্জামান জানান, ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল। তারপরও দাম কমার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে গত মৌসুমের ভুট্টা এখনও মহাজনদের কাছে মজুদ থাকায় নতুন ভুট্টা কেনায় মহাজনদের আগ্রহ কম। এটাও একটা বড় কারণ হতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় সারা দেশে ফসল ও সবজি সংরক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধি করা। এছাড়া, উত্তরাঞ্চলের ভুট্টা চাষিদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষের উচিত শুধু স্টোরেজ সুবিধা তৈরি করা নয়, কাছাকাছি ভুট্টা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রও স্থাপন করা। এর ফলে কৃষকরা শুধু তাদের উৎপাদিত ভুট্টা থেকে বেশি উপার্জনের সুযোগই পাবে না, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ খুব শিগগিরই ভুট্টা উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে।