শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার সোমেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু লুটপাটের মহোৎসব চলছে। স্থানীয় প্রভাবশালী বালুদস্যুরা সোমেশ্বরী নদীর তাওয়াকোচা, বালিজুরি, খাড়ামুড়াসহ বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে। দিনেরাতে এসব ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। স্থানীয়রা জানান, গত এক যুগেরও অধিক সময় ধরে এ নদী থেকে অবৈধভাবে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে বালুদস্যুরা। অনেকেই বালু লুটপাট চালিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। জানা গেছে, শ্রীবরদী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দুরত্বে সোমেশ্বরী নদীর বালিজুরি এলাকা। আর ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর থেকে দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। ফলে অবৈধভাবে বালু লুটপাট বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নেয়ার আগে খবর হয় বালুদস্যুদের মাঝে। এতে বালু উত্তোলন যন্ত্র সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি সটকে পরে তারা। এতে অভিযান ব্যর্থ হয় প্রশাসনের। এরপরেও মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। দুই একটি ড্রেজার মেশিন ভাঙচুরও করা হয়েছে। কারো কারো আবার জরিমানাও হয়েছে। কিন্তু স্থায়ীভাবে বালু লুটপাট বন্ধ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী বালুদস্যুরা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থেকে অবাধে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে। বালুদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ মুখ পর্যন্ত খুলতে সাহস পান না। গত মঙ্গলবার বিকালে সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে ৮/১০টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। খাড়ামুড়া সীমান্তের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত বসানো হয়েছে ড্রেজার মেশিন। বালুদস্যুদের থাপায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে, সোমেশ্বরী নদীর দু’পার। এসব ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলনের পর ট্রাক ও মাহিন্দ্র যোগে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হলে জানা গেছে, প্রতি ট্রাক বালু ১০-১২ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন অবৈধভাবে বিক্রি করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা মূল্যের বালু। নদীর পাড় কেটে অবাধে অবৈধভাবে বালু লুটপাটের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। অপরদিকে প্রতিবছর সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব আয় থেকে। জানা গেছে, প্রভাবশালী বালুদস্যুরা অবাধে বালু লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে। প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। অবাধে বালু উত্তোলন ও পরিবহনের কারণে নদীর দু’পাশের রাস্তাগুলো ক্ষতবিক্ষত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন। বর্তমানে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মনিরুল হাসানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে বলা আছে। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল কবীরের সঙ্গে কথা হলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।