গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পাতা খেলা। যা আজ বিলুপ্তির পথে। স্থানীয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদের উদ্যোগে গত শুক্রবার বিকালে নওগাঁ সদর উপজেলার লখাইজানি গ্রামের মাঠে এ খেলাটির আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে বিভিন্ন বয়সি হাজারো নারী-পুরুষ এ খেলা উপভোগ করে। তবে হারিয়ে যাওয়া গ্রামবাংলার খেলা ফিরিয়ে আনার দাবি এলাকাবাসীর। সুস্থধারার গ্রামীণ এসব খেলার মাধ্যমে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সাম্প্রতিক বন্ধন অটুট থাকবে এমন প্রত্যাশা স্থানীয়দের। মাঠের মাঝে পুঁতে রাখা হয়েছে আস্ত কলাগাছ। গাছের গোড়ায় মাটির ঘটিতে আমের পাতা ও পানি। আর পাশেই আরেকটি বাটিতে মন্ত্র পড়া দুধ-কলা। কলার গাছ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে খেলোয়াড়দের খেলার জন্য চক্রাকারে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। যেন অন্যরা প্রবেশ করতে না পারে। আর ঘটির পানিতে হাত ভিজিয়ে খেলোয়াড়রা অবস্থান নিয়ে মাটিতে হাত রেখে শুরু হলো মন্ত্র পড়া। এ খেলাটির নাম তন্ত্র-মন্ত্রে ‘পাতা খেলা’। খেলায় ওঝা বা তান্ত্রিক এবং পাতা বা সন্যাসী অন্তত ২০ জন অংশ নেয়। বাদ্যের তালে তালে সন্যাসীরা শারীরিক কসরত প্রদর্শণ করে। মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে সন্যাসীরা কেউ লাফিয়ে কলাগাছে ওঠার চেষ্টা করে। আবার কেউ বা সাপের মতো ফনা তুলে কলাগাছে আঘাত করছে। কেউ চক্রাকারের ভেতর থেকে মন্ত্রের টানে বেরিয়ে যায়। আবারো তাকে ধরে নিয়ে আসা হয়। এভাবে প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় মুগ্ধ হয়ে সন্যাসীরা কলাগাছটি ভেঙে ফেলে। এভাবে শেষ হয় পাতা খেলা। আর মুগ্ধ হয়ে সন্যাসীদের মন্ত্রের মাধ্যমে সুস্থ করেন তান্ত্রিকরা। তবে খেলা শুরুর আগে একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। এতে খেলার মাঠে পানি জমে অন্য রকম এক আমেজ বিরাজ করছিল। আবহাওয়া অনেকটা শীতলতা বিরাজ করছিল। খেলোয়াড় ও দর্শকরা খেলা দেখেও তৃপ্তি পেয়েছিল। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী গ্রামবাংলার এই পাতা খেলা দেখে উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিভিন্ন বয়সিরা খেলা উপভোগ করেন। খেলা দেখতে আসা গৃহবধূ আফরোজ বেগম বলেন- এ খেলা দেখে অন্যরকম এক অনুভূতি পাওয়া যায়। মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে পাতা বা সন্ন্যাসী যাদের বলে তাদের নাচ দেখা হয়। আবার কেউ কলাগাছে ওঠার চেষ্টা করে পিছলে পড়ে যায়। আবার ওঝারা ঝাঁড়-ফুক করে। খেলোয়াড় আব্দুল আজিজ বলেন- মাঠের মাঝে কলাগাছ পুঁতে রাখা হয়।