কৃষকের লিজ নেওয়া জমির ধান কেটে বিক্রি করলেন ইউএনও
প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
দিনাজপুর প্রতিনিধি
লীজের জমিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর প্রশাসনের মৌখিকভাবে অনুমতিতে বোরো ধান রোপণ করেছিলেন কৃষক আব্দুর রাজ্জাক। আর সেই ধান কেটে বিক্রি করে দিলেন কাহারোলের ইউএনও আমিনুল ইসলাম। দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার চক বাজিতপুর এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাকের লিজ নেয়া ৫ বিঘা জমির ধান কেটে বিক্রি করে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলাম। ধান রোপণ, জমিতে সেচ, নিরানি, কীটনাশক ও সার প্রয়োগ কোনোটাতেই বাধা ছিল না। শীত, রোদ, বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে দিন-রাত জমিতে কাজ করে ফসল ফলান কৃষক আব্দুর রাজ্জাক। আর সেই ধান কেটে নিয়ে গেছে প্রশাসন। এখন কৃষকের হাহাকার, গরিবের পাশে কেউ নেই। জানা গেছে, ১৯৬৩-৬৪ অর্থ বছরে তার বাবা বজলার রহমানকে ২ একর ৪২ শতক (৫ বিঘা) জমি লিজ প্রদান করে তৎকালীন দিনাজপুর জয়েন্ট কালেক্টর অফ রেভিনিউ। সেই সময় থেকেই তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা সরকারকে খাজনা পরিশোধের মাধ্যমে ভোগ-দখল করে আসছেন। কিন্তু ২০১২ সালে ওই জমিতে চাষাবাদে বাধা দিলে আদালতের স্মরণাপন্ন হয় তার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক। ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর উচ্চ আদালত ওই জমিতে এক বছরের স্থিতাবস্থার আদেশ দেন। এরপর প্রশাসনের মৌখিক আদেশে জমিতে বোরো ধান রোপণ করে আব্দুর রাজ্জাক। কিন্তু ধান ঘরে তোলার আগেই কেটে নিয়ে গেছে প্রশাসন। প্রশাসন ধান রোপণ, সেচ ও নিরানি দেয়া, কীটনাশক ও সার প্রয়োগের সময় কোনো বাধা দেয়নি। অথচ ধান পাকার পর কেটে নিল কেন, স্থানীয় ও স্বজনদের প্রশ্ন। আব্দুর রাজ্জাকের মা সবেজা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী সরকারের কাছ থেকে জমিটি লিজ নিয়েছিল। আমরা নিয়মিত খাজনা খারিজের টাকা পরিশোধ করে আসছি। জমিটি নিয়ে আমরা হাইকোর্ট থেকে নিষেধাজ্ঞাও পেয়েছি। এরপর প্রশাসনের মৌখিক নির্দেশে জমিতে ধান রোপণ করেছি। কিন্তু তারা আমাদের সকল ধান কেটে বিক্রি করে দিল। আমরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। ঋণে টাকা নিয়ে ধান আবাদ করে পথে বসে গেছি। আল্লাহ তাদের ভালো করবে না।’ কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘খুব কষ্ট করে ধান আবাদ করেছি। প্রশাসনের মৌখিক অনুমতি নিয়ে রোপণ করেছি। আমি এসিল্যান্ড ও ইউএনওর কাছে গেছি। আমি কারো কাছে বিচার পাইনি। ইউএনও আমাকে ডাকতে চাইছিল। কিন্তু তার আগেই জমির ধানগুলো কেটে বিক্রি করে দিয়েছে ইউএনও। জমির ধান আবাদ করতে গিয়ে আমি অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে গেছি। এখন আমার কাছে কোনো কিছুই নেই। এসিল্যান্ডের অনুমতি নিয়ে ধান রোপণ করেছি। এতদিন তারা কোনো কিছু বলল না, আজকে আমার জমির ধান কেটে বিক্রি করে দিল তারা। এই জমি থেকে আমার ২৫০ মণ ধান আবাদ হয়। আমার অনুপস্থিতিতে ইউএনও ধান কেটে নিল।’ কাহারোলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) বোরহান উদ্দীন বলেন, ‘জমির ধান কাটার বিষয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। জমি থেকে সর্বমোট ১০৫ মণ ধান পাওয়া গেছে। সেখানে উন্মুক্ত নিলামে ৬৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।’ এ ব্যাপারে কাহারোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সিএস, এসএ, ভিপি ও আরএস বাদ দিয়ে সবগুলো সরকারি। ভুয়া দলিল করে জমিটি ভোগদখল করছে। তারা নিম্ন আদালতে নিষেধাজ্ঞার জন্য ২ বার আবেদন করেছিল। কিন্তু ২ বারই তাদের আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে। পরে তারা হাইকোর্টে গেছে, সেখানেও হয়নি।’