ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

৫ বছরেও নির্মাণ হয়নি সেতু ভোগান্তিতে ৯ গ্রামের মানুষ

৫ বছরেও নির্মাণ হয়নি সেতু ভোগান্তিতে ৯ গ্রামের মানুষ

৯ গ্রামের চলাচলের একমাত্র সেতুটির নির্মাণকাজ দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ফেলে রাখা হয়েছে। সেখানে চলাচলের জন্য ঠিকাদার ও স্থানীয়রা মিলে একটি সাঁকো তৈরি করে। এ সাঁকো দিয়ে এতদিন পারাপার করলেও ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে সাঁকোটি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এতে ৯ গ্রামের মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে দুই পাড়ের প্রায় ২২ হাজার মানুষ। পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার ৫ নম্বর শিয়ালকাটি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এ সেতুটির অবস্থান। জানা গেছে, জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতু দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, এনজিও, জোলাগতি মুসলিম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জোলাগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফলোইবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জোলাগাতি ফাজিল মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা করেন কয়েক গ্রামের মানুষ। খালের দুই পাড়ে ৯টি গ্রামের মানুষ এ ব্রিজ ব্যবহার করে। শিয়ালকাঠি, জোলাগাতি, ফলোইবুনিয়া, শাপলাজা, শংকরপুর, পাংগাসিয়া, পার্শ্ববর্তী ভান্ডারিয়ার ভিটাবাড়িয়া, রাজাপুরের একটি অংশের মানুষের একমাত্র চলাচলের মাধ্যম এ সেতু। নির্মাণকাজ বন্ধ থাকার পরে তারা সাঁকো দিয়ে পারাপার করতেন। ঘূর্ণিঝড়ে সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় ১৫ দিন ধরে এসব গ্রামের মানুষের চলাচল বন্ধ থাকায় প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে তাদের চলাচল করতে হচ্ছে। ঠিকাদার একটি খেয়ার ব্যবস্থা করে দিলেও টাকা না দেওয়ায় দুই দিন পর বন্ধ হয়ে গেলে স্থানীয় লোকজন আবার একটি নৌকায় এনে খেয়া পারাপারের ব্যবস্থা করে। এ ঝুঁকিপূর্ণ খেয়াই তাদের একমাত্র ভরসা। উপজেলার শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের শিয়ালকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পাঙ্গাশিয়া খালের ওপর প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আরসিসি গার্ডার সেতুটি ৫ বছর আগে সেতুর কার্যাদেশ পেয়ে ২ বছরের অধিক সময় ধরে সেতুটি ভেঙে নির্মাণকাজ শুরু করলেও ১০ শতাংশ নির্মাণকাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর ৫ কোটি ৭৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৭ মিটার আরসি গাডার ব্রিজের টেন্ডার হয়। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে এক বছরের চুক্তিতে নির্মাণ কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও দফায় দফায় সময় বৃদ্ধি করে ৫ বছরেও কাজটি শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। খালের ওপর থাকা পূর্বের লোহার সেতুটি অপসারণ করে নতুন সেতু নির্মাণ করার জন্য পাইলিংয়ের কাজ শেষ করে ফেলে রাখে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান, যার ফলে স্থানীয় মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিন এখান থেকে কয়েক হাজার মানুষ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী, অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ ও সাধারণ মানুষের যাতায়াতের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এ সেতু। বর্তমানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ খালটি মাঝির নৌকায় করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এ পারাপারে অনেকে দুর্ঘটনার কবলেও পড়েছেন। দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা না করলে খালের ভেতরে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনাসহ প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। ইউপি সদস্য রুবেল বলেন, এখানে একটি ভালো ব্রিজ ছিল, নতুন ঢালাই ব্রিজ করার জন্য বছরের পর বছর ধরে ভেঙে রেখেছে। আমাদের এখানে জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ হাজার লোক যাতায়াত করে। যাতায়াতে অনেক ভোগান্তি প্রতিদিনই দেখা যায়। ছাত্রছাত্রীরা পড়ে যায়, মহিলারা পড়ে যায় নৌকা থেকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ দ্রুত এ ব্রিজটি নির্মাণের যেন ব্যবস্থা করে দেয়। স্থানীয় তরুণ সমাজসেবক রাসেল রাঢ়ী বলেন, খালের দুই পাড়ের জনগণসহ হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তি শিকার হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নুরুল আমিন মাঝে মাঝে সেতুর নির্মাণকাজ করেন আবার বন্ধ করে দেন। ফলে এলাকার মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই, কবে এ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে তা ঠিকাদারই ভালো জানেন। ইতোমধ্যে আমরা এ বিষয়ে বহুবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ করেছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। জোলাগাতি মুসলিম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুস্তম আলী বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখন এ মাঝির নৌকায় পারাপার করায় জীবনের ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে, এ নিয়ে আমরা এখন চিন্তিত। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মো. নুরুল আমিন বলেন, আমরা শিগগির সেতুটি নির্মাণ করে ফেলব। আমাদের কাজ চলমান। শিয়ালকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ সেতুটি ইউনিয়নের অতি গুরুত্বপূর্ণ সেতু। সেতুটি নির্মাণে বিলম্ব হওয়ার কারণে এলাকাবাসীর খুবই সমস্যা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমরা বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও কাজটি শেষ করছে না। উপজেলা প্রকৌশলী ইমতিয়াজ হোসাইন রাসেল বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত