নওগাঁয় পশু মোটাতাজাকরণে বেড়েছে খরচ
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আব্বাস আলী, নওগাঁ
প্রতি বছর কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে নওগাঁয় পশু মোটাতাজাকরণ করে প্রান্তিক খামারি ও কৃষকরা। যার মধ্য দিয়ে গতি আসে অর্থনীতিতে। জেলায় ৩৪ হাজারের অধিক খামারে পশু মোটতাজা করা হয়েছে। তবে গোখাদ্য দানাদার খাবারের দাম কিছুটা বাড়ায় পশু লালন-পালনে বাড়তি খরচ পড়ছে খামারিদের।
এতে খরচ বাড়ায় হাটে পশুর দামও কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছেন খামারিরা। এরই মধ্যে কোরবানির হাট জমতে শুরু করেছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে- জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৪ হাজার ৫৩৪ খামার রয়েছে।
এসব খামারে ৭ লাখ ২৮ হাজার ১১০টি পশু মোটাতাজা করা হয়েছে। এরমধ্যে ৯১ হাজার ৪৭টি ষাঁড়, ২৯ হাজার ১১১টি বলদ, ৬৫ হাজার ৬৮টি গাভী, ২ হাজার ৪০৩টি মহিষ, ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৯২৯টি ছাগল এবং ৭৫ হাজার ৫৫২টি ভেড়া।
জেলার চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭৫৯টি। এসব খামারে কয়েক হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ভালো দাম পাওয়ার আশায় গবাদিপশু লালন পালনে ব্যস্ত সময় খামারিরা। এসব খামারে দেশী ষাঁড়, শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান ও অষ্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন জাতের গরু, ছাগল ও ভেড়া লালন-পালন করা হচ্ছে। তবে এ বছর গোখাদ্য দানাদার খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় গবাদিপশু লালন পালন করতে তুলনামূলক খরচ পেড়েছে বেশি। খামারিরা বলছেন- আবহাওয়া গরম থাকায় নিয়মিত পশুদের গোসল করে ঠান্ডা রাখতে হচ্ছে।
রোগ-বালাইয়ের কারণেও চিকিৎসা এবং ওষুধের খরচ বেড়ে যাওয়াসহ বাড়তি যত্ন নিতে হয়েছে। এছাড়া বেড়েছে দানাদার খাবারের দাম। এতে গবাদিপশু লালন পালনে বাড়তি খরচ গুনতে হয়েছে। তবে খরচ কমাতে সবুজ ঘাস চাষ করা হয়েছে। খাবারের সঙ্গে তিনবেলা ঘাস দিতে হয়। হাটে ভালো দাম পাওয়ার আশা তাদের। তবে অবৈধপথে ভারত থেকে যেন পশু না আসে, সেই দাবি খামারিদের। কোরবানি দাতারা পশু কিনতে ছুটছেন হাট-বাজারে। তারা বলেন- গত বছর যে গরু ৮০ হাজার টাকায় কেনা হয়েছিল। এ বছর একই আকারের পশুর দাম প্রায় ৯৫ হাজার টাকায় কিনতে হয়েছে। খাবারের দাম বাড়ায় পশুর দামও ঊর্ধ্বগতি। পশুর দাম বাড়ায় অনেকে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
সদর উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের খামারি সোহেল রানা বলেন- খামারে কোরবানির যোগ্য ৯টি ষাঁড় রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর দানাদার খাবারের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। এতে করে প্রতিটি গরুতে ৩-৪ হাজার টাকা খরচ বেশি পড়েছে। দানাদার খাবার কমাতে ১০ বিঘা জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ করা হয়েছে। তবে খাবারের দাম কমানো গেলে খামারিদের জন্য সুবিধা হয়। শুকুর চাঁদপুর গ্রামের খামারি মামুন হোসেন বলেন- কোরবানির জন্য ১০টি ষাঁড় প্রস্তুত করা হয়েছে। গত ১১ মাস থেকে ষাঁড়গুলো পালন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত খরচ পড়েছে প্রায় ১২-১৩ লাখ টাকা। বিক্রি করলে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো হবে। এসব গরুকে দেশীয় খাবার দিয়ে মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। যদি ভারত থেকে গরু আসে তাহলে খামারিদের গুনতে হবে। চোরাইপথে যেন ভারতে থেকে পশু আসতে না পারে, সে বিষয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। খামারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন চপল মাহমুদ। তিনি বলেন- প্রায় ৩০টি দেখাশোনা করেন। প্রতিমাসে ১২ হাজার টাকা মজুরি হিসেবে কাজ করেন। গরুকে গোসল করানো, খাবার দেয়াসহ আনুষঙ্গিক কাজ করতে হয়। নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: আবু তালেব বলেন- পশু পালনের মাধ্যমে খামারিরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তবে দানাদার খাবারের দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় পশু লালন-পালনে খামারিদের খরচ কিছুটা বেড়েছে। খরচ কমাতে খামারিদের ঘাস চাষসহ সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।