ঢাকা ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টাকা বকেয়া

নওগাঁয় চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

নওগাঁয় চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

নওগাঁয় কোরবানি উপলক্ষ্যে পশুর চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু করেননি চামড়া ব্যবসায়ীরা। তবে চামড়া প্রস্তুতের মূল উপকরণ লবণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে। এছাড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে বিগত বছরের বকেয়া পাওনা রয়েছে। ফলে এ বছর চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। চামড়া শিল্পকে রক্ষা করতে জেলাভিত্তিক চামড়া ব্যবসায়িদের ঋণ দেওয়াসহ সরকারের নজরদারি বাড়ানো গেলে আবারো ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

এরই মধ্যে সরকার এ বছর চামড়ার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। গতবারের তুলনায় খাসির কাঁচা চামড়ার দাম ২ থেকে ৫ টাকা বাড়িয়ে প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ৬ টাকা বাড়িয়ে ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নওগাঁ শহরের গোস্তহাটির মোড়ের পাশে ‘চামড়া পট্টি’। আর কয়েকদিন পরেই এসব চামড়া আড়তে ব্যবসায়িদের হাকডাকে মুখরিত হয়ে উঠবে। কিন্তু কোরবারি চামড়া কেনার প্রস্তুতি এখনো শুরু করেননি চামড়া ব্যবসায়ীরা। জেলায় প্রতি মৌসুমে চামড়া লবণজাত করতে প্রয়োজন হয়, অন্তত ৩৫০ মেট্রিক টন লবণ। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭৪ লাখ টাকা। কিন্তু বকেয়া টাকার পাশাপাশি লবণের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে ফেলেছে চামড়া ব্যবসায়ীদের। প্রতিবস্তায় মোটা লবণের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। মোটা লবণের দাম ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা। এতে চামড়া সংরক্ষণের খরচ বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ১৫০ জন চামড়া ব্যবসায়ী রয়েছে। কয়েকজন ট্যানারি মালিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও ট্যানারি মালিকরা সে দামে কিনে না। সিন্ডিকেট থাকায় ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে এক প্রকার জিম্মি। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। এসব টাকা পেলে ঘুরে দাঁড়াবে চামড়া শিল্প। এবছরও চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। শ্রমিকরা জানান- জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০টি চামড়া গুদাম ছিল। যেখানে সারা বছর প্রায় শতাধিক শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হয়েছিল। বর্তমানে রয়েছে ২টি গুদাম। যেখানে কাজ করেন ৫ জন। তবে মৌসুমে কোরবানির মৌসুমি প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। চামড়া গুদামে কাজ করা অনেক কষ্টের। একারণে শ্রমিকরা ভিন্ন পেশা চলে গেছে। জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন খান বলেন- গত প্রায় ৫ বছরে ঢাকায় ব্যবসায়ীর কাছে আমার প্রায় ১২ লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে পড়েছে। এতে পুঁজি হারিয়ে ব্যবসার দিকে এখন দুর্বল হয়ে পড়েছি। কোরবানির সময় ধারদেনা করে চামড়া কিনতে হয়। কিন্তু ধারের টাকা আমরা পরিশোধ করতে পারি না। অপরদিকে ব্যবসায়ীরাও আমাদের টাকা আটকিয়ে রাখে। এভাবে আসলে ব্যবসা চলে না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ তিনি যেনো চামড়া শিল্পের দিকে নজর দেন। আরেক চামরা ব্যবসায়ী বাবু লাল বলেন- আমরা ছোট ব্যবসায়ী। গত ৬ বছরে প্রায় ১১ লাখ টাকা আটক রয়েছে। সামনে কোরবানি ঈদ চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় মধ্যে রয়েছি। এরমধ্যে আবার লবণের দাম বেড়েছে মনে ১০০-১৫০ টাকা। ধারদেনা করে চামড়া কেনার পর আবার বিক্রি করার সমস্যায় পড়তে হয়। যারা নগদ টাকায় কিনতে চাই তারা দামও কম দিতে চায়। যেখানে বেশি দামে আমাদের কাঁচা চামড়া কিনে শ্রমিক দিয়ে লবণজাত করতে হয়। সেখানে কীভাবে লোকসান করে বিক্রি করব।

নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি মো: মোমতাজ হোসেন বলেন- গত বছর জেলায় গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়াসহ প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার পিস চামড়া প্রস্তুত করা হয়েছিল। যার বাজারদর প্রায় ৬ কোটি টাকা। এ বছরও একই পরিমাণ চামড়া কিনে প্রস্তুত করা হবে। গত ৫ বছরে (২০১৯-২৩ সাল) জেলার প্রায় ১৫০ জন চামড়া ব্যবসায়ী ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রায় ৫ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে।

বকেয়া টাকা পাওয়া গেলে আবারও ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াবে। তবে ২০২৩ সালের বকেয়া টাকার ১০-১৫ শতাংশ হারে পরিশোধ করা হচ্ছে। এই সামান্য টাকা দিয়ে আসলে তেমন কিছুই হবে না। আর এভাবে চলতে থাকলে চামড়া শিল্পে ধ্বস নেমে আসবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত