হাকিমপুর উপজেলার সাদুড়িয়া বাজারের সরকারি হাটের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে পাকা দোকানঘর নির্মাণ করছেন প্রভাবশালীরা। হাট ও বাজার কমিটির সভাপতি মো. রুহুল আমিন দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস পূর্বে অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেও কোনো সুরাহা পাননি। হাটের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সপ্তাহে দুই দিন শুক্রবার ও মঙ্গলবার হাট বসছে হিলি-বগুড়া মহাসড়কের দুই পাশে। এতে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা করছেন পথচারী ও দোকানিরা। অভিযুক্তরা বলছেন তাদের ক্রয়কৃত জমির উপরে তৈরি করেছেন দোকান ঘর। এদিকে প্রশাসন বলছে, বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গত মঙ্গলবার সাপ্তাহিক হাটের দিনে হাট কমিটির সভাপতি, অভিযুক্তকারী, এলাকাবাসী ও দোকানিদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়। সাদুড়িয়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা রোস্তম আলীসহ বেশ কয়েকজন জানান, এই বাজারে সাপ্তাহিক হাট বসার জন্য আমাদের গ্রামের হায়তন আলী প্রথমে তিন শতক জায়গা হাটের নামে কবলা রেজিস্ট্রি করে দেয়।
এরপর প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে এই বাজারে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসেন। সেই মোতাবেক গত ২০০৪ সালে হাটে দোকানিদের বসার জন্য সরকারি ভাবে সেট তৈরি করা হয়। সম্প্রতি সময়ে নতুন রেকডে দেখা যায় হাটের জায়গা কম হওয়ায় সরকারি ভাবে ১৩ শতক জায়গা হাটের নামে রেকর্ড করা হয়েছে এবং সরকার জমি অধিগ্রহণ শুরু করেছেন। কিন্তু এই গ্রামের মৃত শ্রী রুহীনি কান্ত সরকারের ছেলে পল্লী চিকিৎসক ডা. গৌড় চন্দ্র, ডা. পরিতোষ চন্দ্র, নিতাই চন্দ্র ও অশীম চন্দ্র চার ভাই ও বিপুল চন্দ্র হাটের জায়গা দখল করে পাকা দোকান ঘর তৈরি করছেন। এতে করে হাটের জায়গা সংকীর্ন হয়েছে। বাধ্য হয়ে মহাসড়কের দুই পাশে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসছে। এতে করে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আমরা শঙ্কা করছি। দ্রুত হাটের জায়গায় তৈরি করা অবৈধ দোকানঘর ভেঙে দিয়ে পূর্বের জায়গায় হাট বসাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি। হাট ও বাজার কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন জানান, হাটের সরকারি নির্ধারিত জায়গা কিছু অসাধু লোকজন অবৈধভাবে দখল করে পাকা দোকানঘর তৈরি করায় হাটের জায়গা সংকট হয়ে পড়েছে। হাটে আগত ও স্থায়ী দোকানদাররা হিলি- বগুড়া মহাসড়কের পাশে হাটের দিনে দোকান বসায়। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে এই সড়কের দুই পাশের সম্প্রসারণ কাজ শুরু হওয়ায় সংকীর্ণ জায়গায় হাট বসছে। যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা এর দায়ভার কে নিবে! তাই হাটের জায়গা পূর্ণ উদ্ধারের জন্য গত ২৩ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমি এর নিকট অভিযোগ দাখিল করেছি। এতে কোনো সুরাহা না হওয়ায় বর্তমানে ও মহাসড়কের দুই পার্শে সংকীর্ণ জায়গায় হাট বসছে।
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিজে লোকজন নিয়ে এসে হাটের জায়গা মেপে খুঁটি গাড়িয়ে দেয় এবং অবৈধভাবে তৈরি করা দোকান ঘরের শাটার খুলে অভিযুক্তদের হাতে বুঝিয়ে দেয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এসব ঘর ভেঙে দিয়ে হাটের জায়গা বাহির করা হবে। কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় ওই দোকানঘরের চারটি শাটার লাগায়। খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার এসিল্যান্ড আবারো বাজারে আসেন এবং শাটার লাগানো দেখে চলে যান। কোনো কিছুই বলেননি। হাট ইজারাদার নাঈমুর ইসলাম (লাল মিয়া) বলেন, আমি ২০২৩ সালে হাটটি ইজারা নেই। হাট বুঝে নেওয়ার পরে দেখি হাটের জায়গা সংকীর্ণ। পরে জানতে পারি ইতিপূর্বে সাদুড়িয়া গ্রামের শ্রী রুহীনি কান্ত সরকারের ছেলে পরিতোষ, গৌর, নিতাই, অসীম চন্দ্র চার ভাই ও জনৈক বিপুল চন্দ্র সরকারি এই হাটের জায়গা দখল করে পাকা স্থায়ী দোকান ঘর নির্মাণ করছেন। এ কারণে হাটের জায়গা সংকীর্ন হওয়ায় ব্যবসায়ীরা রাস্তার পাশে বসছেন। তাই হাটের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য হাট কমিটির সভাপতির সাথে আলাপ করে তার মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমি এর নিকট লিখিত অভিযোগ করায়।
তিনি আরো বলেন, গত ৮ জুন আবারও ইউএনও ও এসিল্যান্ড বাজারে এসে ঘটনাস্থল সরেজমিন তদন্ত করেছেন। অবৈধভাবে সরকারি জায়গায় তৈরি করা ঘবের ছবি ও ভিডিও করে নিয়ে গেছেন। আশা করি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
হাটের জায়গা দখলকারী গৌর চন্দ্র বলেন, আমরা চার ভাই তাদের কবলা এবং রেকর্ড করা সম্পত্তিতে দোকানঘর নির্মাণ করতেছি। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে এরকম কোন কাগজ কোন অফিস থেকে পাইনি। তবে আমরা আমাদের জায়গা ফিরে পেতে আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। প্রতিপক্ষরা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় জানান, হাটের জায়গায় দোকান ঘর নির্মাণের অভিযোগ পেয়েছি। ইতিপূর্বে আমি সহকারী কমিশনার ভূমিকে সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছিলাম। গত ৮ জুন জেলা প্রশাসকের দিক নির্দেশনা মোতাবেক সরেজমিন তদন্ত করেছি। যত দ্রুত সম্ভব জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।