দেশের বিভিন্ন স্থানে জমে উঠেছে কোরবানি পশুর হাট

প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে জমে উঠেছে কোরবানি পশুর হাট। প্রতিবারের মতো এবারো বড় গরুর চেয়ে মাঝারি পশুর চাহিদা বেশি। দাম নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে সীমান্ত দিয়ে গরু প্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক রয়েছে প্রশাসন। প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ-

শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) : বেলা বাড়ার সাথে সাথেই ভিড় বাড়ছে হাটে। উপজেলার সব থেকে পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী হাট দেউলভোগ গরুর হাট। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়- অসংখ্য ট্রাক, ট্রলার, নসিমনযোগে হাটের পাশে রাস্তায় গরু নামাচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে গরুর মহাজনেরা ও হাট সংশ্লিষ্টরা। হাটে দেশি গরুর সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। কিছু কিছু ক্রেতারা তাদের বিক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি করতে দেখা যায়। হাটের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সব সময় পুলিশ ও হাট সংশ্লিষ্টরা নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া হাটে এসে যেন কেউ প্রতারিত না হয়, সেজন্য একটু পর পর মাইকিং করা হচ্ছে। হাটে দেশি গরুর পাশাপাশি ক্রস, শংকর, শাহীয়াল গরু, ফ্রিজিয়ান গরু ও বিক্রি করার জন্য বিক্রেতারা নিয়ে এসেছে।

নাটোর : নাটোর শহরের তেবাড়িয়ায় প্রতি গত রোববার বসে জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট। এছাড়া বড়াইগ্রাম উপজেলার মৌখাড়া হাট শুক্রবার, সিংড়া ফেরিঘাটে সোমবার ও বৃহস্পতিবার, বাগাতিপাড়ার পেড়াবাড়িয়া, গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় এবং গোপালপুর উপজেলার মধুবাড়ীতে বসে গরু-ছাগলের হাট। তাছাড়া অস্থায়ীভাবে করোটা, গোবিন্দপুর, গুনাইখারা, হাতিয়ান্দহ, জোনাইল হাটে কোরবানির পশু বিক্রি হবে।

চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গায় জমে উঠেছে ছোট-বড় ১১টি পশুরহাট। শেষ মুহূর্তে পশুর হাটগুলোতে বাড়ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তবে এবছর কোরবানির পশুর দাম নিয়ে অসন্তুষ্ট ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে। এ জেলায় এ বছর ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৬ টি কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে পশু প্রস্তুত রয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৮০৭টি। যা দিয়ে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও ৫২ হাজার ৯৫১টি কোরবানিযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। চুয়াডাঙ্গায় এবছর সরাসরি খামার ও পশু হাটগুলোতে ১ হাজার কোটি টাকার অধিক বাণিজ্য হবে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

চাঁদপুর : চাঁদপুরের বিভিন্ন হাটে এরই মধ্যে বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে। পশুর হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাপারীরা আসছেন। জেলায় ছোট ছোট বেশ কিছু খামারে পালন করা হয় দেশি-বিদেশি জাতের গরু। এসব গরু প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘাস, খড়সহ দানাদার খাদ্য খেয়ে বেড়ে উঠে। চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলার ৮ উপজেলার ৩ হাজারের অধিক খামারি এ বছর কোরবানিতে বিক্রির জন্য ৮১ হাজার ৮৯০টি পশু প্রস্তুত করেছেন।

খাগড়াছড়ি : হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা আসছেন। ক্রেতা বিক্রেতায় মুখর খাগড়াছড়ি জেলার প্রতিটি পশুর হাট। পার্বত্য এ জেলায় ছোট ছোট বেশ কিছু খামারে পালন করা হয় দেশি-বিদেশি জাতের গরু। তবে এখানকার অধিকাংশ গরু, ছাগল স্থানীয় কৃষকরা লালনপালন করেন। জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এ বছর কোরবানি উপযোগী গরু রয়েছে ১২ হাজার ২৬টি, ছাগল ৪২ হাজার, মহিষ ২৪টি ও ভেড়া ৪২৫টি। খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলায় ৩৬টি হাট রয়েছে।

কচুয়া (চাঁদপুর) : ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখর কচুয়ার প্রতিটি পশুর হাট। কচুয়া উপজেলায় ছোট ছোট বেশ কিছু খামারে পালন করা হয় দেশি-বিদেশি জাতের গরু। তবে এখানকার অধিকাংশ গরু, ছাগল স্থানীয় কৃষকরা লালন পালন করেন। এসব গরু, ছাগল প্রাকৃতিক পরিবেশের লতাপাতা ঘাস খেয়ে বেড়ে উঠে। কচুয়ার পালাখাল এলাকায় গরুর হাটে গরু কিনতে আসা আব্দুল মালেক জানান, বাজারে গরু বিক্রেতার চেয়ে ব্যবসায়ী আর দালালের উপস্থিতি অনেক বেশি। এ কারণে গরুর দাম অনেক বেশি চাওয়া হচ্ছে।

রাঙামাটি : পাহাড়ি গরুর চাহিদা বেশি থাকায় পাহাড়ের বিভিন্ন স্থান থেকে পশু সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিগত দিনে নানা কারণে লোকসান করলেও এবার লাভের মুখ দেখার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। কোরবানির জন্য রাঙামাটির পাহাড়ি অঞ্চলের গরুর চাহিদা বেশি। ঈদকে সামনে রেখে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এরই মধ্যে বেপারীরা রাঙামাটি, লংগদু, বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়িসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পশু সংগ্রহ করে ঢাকাসহ দেশের বড় বড় হাটগুলোতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, পাহাড়ে লালন-পালন হওয়ায় এখানকার গরু ও ছাগলের চাহিদা বেশি।

নড়াইল : নড়াইলে গত বছরের তুলনায় এ বছর গরু-ছাগলের দাম একটু বেশি চাওয়া হচ্ছে। এরপরও ক্রেতারা দাম শুনে বিভিন্ন হাট ঘুরে ঘুরে দেখছেন। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, বিক্রেতারা চড়া দাম হাঁকিয়ে বসে রয়েছেন। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী গরু-ছাগল কিনতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। উপজেলার লোহাগড়া, শিয়রবর, লাহুড়িয়া, দিঘলিয়া ও ইতনা পশুর হাটে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি পশুর হাটে গরু-ছাগল নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা। এ সময় বিক্রেতা কালু মিয়া বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর দেশীয় পদ্ধতিতে গরু-ছাগল মোটাতাজা করতে অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। যদি গরুর দাম দেড় লাখ টাকা চাওয়া হয় তাহলে ক্রেতারা তার দাম ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা বলছেন।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধার প্রতিটি হাট-বাজারে প্রচুর পরিমাণে গরু-ছাগল আমদানি হচ্ছে। বিক্রিও বেশ জমে উঠেছে। এখন পর্যন্ত ভারতীয় গরু দেখা না গেলেও বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়েই গরু কেনাবেচায় খুশি নন। গাইবান্ধায় ৪১ স্থানে বসছে কোরবানির পশুর হাট। এর মধ্যে ২৬টি স্থায়ী ও ১৫টি অস্থায়ী হাট রয়েছে। এ ছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে আরও ৭টি প্ল্যাটফর্মে পশু কেনা-বেচা হচ্ছে। সম্প্রতি গাইবান্ধার দাড়িয়াপুর, লক্ষ্মীপুর, ভরতখালি, সাদুল্লাপুর ও মাঠেরহাটসহ আরো বিভিন্ন হাটে দেখা যায় কোরবানি পশু কেনাবেচার চিত্র। এসব হাটে কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে ষাঁড়, বলদ, মহিষ, গাভি, ছাগল ও ভেড়া কেনাবেচা শুরু হয়েছে।

ফরিদপুর : ফরিদপুরের সব থেকে পুরান ও ঐতিহ্যবাহী হাট টেপাখোলা গরুর হাট। সরেজমিন গতকাল বিকালে গেলে দেখা যায়, অসংখ্য ট্রাক, নসিমন, হাটের পাশে রাস্তায় গরু নামাচ্ছে। সাথে রয়েছে গরুর মহাজনেরা ও হাট সংশ্লিষ্টরা। হাটে দেশি গরুর সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। কিছু কিছু ক্রেতারা তাদের বিক্রেতাদের সাথে দরকষাকষি করতে দেখা যায়।

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) : উপজেলা চাপাইর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর চেয়ারম্যান বাজার ৫ দিন হাটে কোরবানির পশু কেনাবেচা চলবে বলে জানিয়েছেন বাজার পরিচালনা বোর্ডের কর্মকর্তারা। গরু বেপারী ও ক্রেতা বিক্রেতাদের নিরাপত্তা ও সুবিধার কথা মাথায় রেখে সব প্রস্তুতিসম্পন্ন হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে কোরবানির পশুতে মাঠ ভরে গেছে। আগের চেয়ে ক্রেতার উপস্থিতি অনেকাংশে বেশি দেখা গেছে। জানা যায়, উপজেলায় ১ হাজার ৩৫৭টি খামার রয়েছে। প্রতি বছর কাঞ্চনপুর চেয়ারম্যান বাজারের এ হাটে আশপাশের প্রায় ৩০-৪০টি গ্রাম থেকে স্থানীয় খামারি ও কৃষদের পালিত গরু-ছাগলের মহাসমারোহে মাঠ ভরে যায়।

বাগেরহাট : বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। কোরবানির সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ক্রেতা-বিক্রেতারা ঘুরছেন বিভিন্ন হাটে। সাইজ ও দামে পছন্দ হলে, ক্রয় করে ফিরছেন বাড়িতে। কাঙ্ক্ষিত দামের অপেক্ষা করছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। বাগেরহাট প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাটে ৯টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ী ২৭টি পশুর হাট বসেছে। স্থানীয় ব্যবস্থাপনায়ও অস্থায়ী হাট বসছে বিভিন্ন এলাকায়। এর মধ্যে সব থেকে বড় পশুর হাট ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা গরুর হাট। খাবার ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক পণ্যের দাম বাড়ায় গরুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে দাবি করে ব্যবসায়ী মল্লিক ফারুক হোসেন বলেন, যে ভুষি কিনেছি ৪৫ টাকা সেই ভুষি এখন ৬০ টাকা। ভুট্টার গুড়ি, খৈল, পালিশ সবকিছুরই দামই বেশি। যার কারণে গরুর দামও অনেক।

কুমিল্লা : কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় ৪টি নির্ধারিত পশুর হাট থাকলেও ঈদ উপলক্ষ্যে ১৭টি স্থানে অস্থায়ী হাট বসেছে। পশুর হাট ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নির্বিঘ্নে যাতায়াত, জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিনসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। চান্দিনার কয়েকটি গরুবাজারে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রচুর সংখ্যক কোরবানির পশু বিক্রির জন্য বাজারে আনা হয়েছে। ঈদের আরো ৩ দিন বাকি থাকলেও পশু বিক্রি হচ্ছে ভালোই।

নীলফামারী : নীলফামারীতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় এখন সরগরম হাটগুলো। অনেকে পছন্দের পশু কিনছেন, অনেকে দামদর করছেন। জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে নীলফামারীতে বাণিজ্যিক ও পারিবারিক খামার রয়েছে ৩০ হাজার ৯৭২টি। এসব খামারে গরু-ছাগল রয়েছে- ২ লাখ ৭৬ হাজার ২০১টি। এখন খামারিদের কাছ থেকে পশু কিনে বিভিন্ন হাটে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানায়, এ বছর জেলায় কোরবানির জন্য গরুর চাহিদা ১ লাখ ৪৩ হাজার ১০৯টি। এই সংখ্যা চাহিদার চেয়ে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯২টি। শাহীওয়াল, অস্ট্রেলিয়ান, ফ্রিজিয়ান, ক্রোস ও মুন্ডসহ বিভিন্ন জাতের গুরু রয়েছে খামারগুলোতে। ছাগলের মধ্যে রয়েছে হারিয়ানা, তোতাপুড়ি, রামছাগল ও দেশি জাতের ছাগল।

কুড়িগ্রাম : আর মাত্র ৫ দিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে ঘিরে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন হাটবাজারে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে পশুর হাটে বিক্রেতার ভিড় ততই বাড়ছে। এবার হাটে প্রচুর পশু উঠেছে; কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য গৃহস্থ পর্যায় থেকে শুরু করে খামারিরা লাভের আশায় বিভিন্ন জাতের পশু নিয়ে হাটে এসেছেন। এবার পশুর দাম অনেকটা চড়া। কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, এবার জেলায় গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়াসহ ৩ লাখ ৬৪ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু মজুত আছে। জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার। যা জেলার চাহিদা মেটানোর পর উদ্ধৃত্ত পশু অন্য জেলায় পাঠানো যাবে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপুরহাটে ঘুরে দেখা যায়, বিক্রেতারা বড় গরুর দাম হাঁকছেন ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ৯০ থেকে ১০০ কেজি ওজনের গরুর দাম ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা দাম হাঁকাচ্ছে। ক্রেতারা বলছে গতবারের চেয়ে এবার গরুর দাম বেশি। বিক্রেতারা বলছেন, গোখাদ্যের দামের কারণে দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে।