ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের তথা এশিয়া উপমহাদেশের মধ্যে আয়তনের দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দিনাজপুর গোর-এ শহীদ ময়দানে। যেখানে বিভিন্ন জেলার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। বড় জামাতে অংশগ্রহণ করে তাদের অনুভূতিও ছিল বেশ। আয়োজকরা জানিয়েছে, এবারে এই মাঠে একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন ৩ লাখ মুসল্লি। সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। ইমামতি করেন মাওলানা শামসুল হক কাসেমী। নামাজ শেষে খুদবা ও পরে দেশ, জাতি বিশ্বের মঙ্গল কামনায় মোনাজাত করা হয়। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিন ও জেরুজালেমে নৃসংশতা অবসানের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া কামনা করা হয়। ঈদের জামাতে সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহমেদ, পৌর মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) আবু তৈয়ব আলী দুলালসহ সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং বিভিন্ন স্থরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। ঈদের এই জামাতে গোপালগঞ্জ থেকে আসা জুয়েল শিকদার বলেন, আমি সর্বপ্রথম এত বড় ঈদ জামাতে অংশগ্রহণ করলাম, আমাকে খুব খুশি লাগতেছে। বাবা-মা, দেশবাসীসহ সকলের জন্য দোয়া কামনা করেছি। এত বড় ঈদ জামাত আগে কখনো দেখিনি। বগুড়া থেকে আসা জাবেদ আলী বলেন, আমি এই মাঠে নামাজ পড়তে এসেছি। আমার বাড়ি বগুড়াতে। আমরা অনেক মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছি, খুব ভালো লেগেছে। এর আগেও আমি এই মাঠে এসেছিলাম, আল্লাহ চাইলে আগামীতেও এই মাঠে নামাজ আদায় করতে আসব। শামসুর রহমান জুয়েল বলেন, আমি নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে এই বড় জামাতে অংশগ্রহণ করার জন্য এসেছি। এখানে নামাজ আদায় করলাম, খুব ভালো লাগত। আবহাওয়া ঠিক থাকলে আরো মানুষ আসতে পারতেন, আরো ভালো লাগত। দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ২০১৭ সালে নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ঈদগাহ মাঠটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও মনোরম কৃতির সৌন্দর্য ও নান্দনিক হিসেবে নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। এই ৫০ গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে ২টি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাব (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) তার উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সঙ্গে রয়েছে আরো ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। পুরো মিনার সিরামিকস দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে উঠে। ২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবারে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তবে করোনার প্রকোপের ফলে গত দুই বছরে এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর আবারও পরিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঈদের জামাত।