ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নওগাঁয় লোকসানে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা

নওগাঁয় লোকসানে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা

ঈদ-পরবর্তী সময়ে উত্তরের জেলা নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার চাকরাইল চামড়া আড়তে শুরু হয়েছে চামড়া বেচাকেনা। ছাগল-ভেড়ার চামড়া প্রকারভেদে ২০ থেকে ৬০ টাকা এবং গরু-মহিষের চামড়া প্রতিপিস ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।

তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এ বছর লবণ ও শ্রমিকের মজুরি বেশি। এছাড়া চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম কম রাখায় তাদের লোকসান করে বিক্রি করতে হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, জেলার এ বছর ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭৫৯টির মতো পশু কোরবানি হয়েছে। বদলগাছী উপজেলার চাকরাইল চামড়া আড়ত। যেখানে সপ্তাহে প্রতি বুধবার হাটবার। সারা বছর এ হাটে কম-বেশি চামড়া বেচাকেনা হয়ে থাকে। তবে কোরবানির ঈদ-পরবর্তী সময়ে প্রচুর চামড়া বেচাকেনা হয়। ভোরের আলো ফোটার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে এ আড়ত। জেলায় দুইটি চামড়া আড়ত রয়েছে, তার মধ্যে একটি চাকরাইল। যেখানে জেলার বিভিন্ন উপজেলা, পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলা ও বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা এবং ঢাকা থেকে ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনাবেচার জন্য আসেন।

তবে ঈদ-পরবর্তী গত বুধবার চামড়া আড়তে চামড়া বেচাকেনা জমে উঠেনি। ঢাকা বা জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরা না আসায় কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। আড়তে গরুর চামড়ার সরবরাহ কম হলেও ছাগলের চামড়ার সরবরাহ হয়েছে বেশি। ব্যবসায়ীরা না আসায় তাদের লোকসান করে বিক্রি করতে হয়েছে।

মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এ বছর লবণের দাম বেশি এবং শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় চামড়া লবণজাত করতে তাদের খরচ বেশি পড়েছে। বাইরের ব্যবসায়ীরা না আসায় তাদের লোকসান করে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। লাভের আশায় চামড়া কিনে এখন লোকসান করে বিক্রি করতে হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এ বছর এ আড়তে ছাগল-ভেড়ার চামড়া প্রকারভেদে প্রতি পিস ২০ থেকে ৬০ টাকা এবং গরু-মহিষের চামড়া প্রতি পিস ৩০০- থেকে ৭০০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।

তবে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে না। গত বছরের তুলনায় বস্তায় লবণের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এতে চামড়া প্রক্রিয়জাতে বেড়েছে খরচ। তবে অনেক চামড়া ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখেছেন। চামড়া শিল্পকে রক্ষায় সরকারের হস্তক্ষেপ চান ব্যবসায়ীরা। সাপাহার উপজেলা থেকে চামড়া বিক্রি করতে আসা গোলাম বলেন, মাদ্রাসায় এ বছর ২২টি ছাগলের চামড়া পাওয়া গেছে। চামড়ায় লবণজাত করতে খরচ পড়েছে ৪৪০ টাকা। আড়তে বিক্রি করেছি ৩৪০ টাকায়।

এর মধ্যে ২০ টাকা খাজনা দিয়েছি। এখন ভ্যান ভাড়া দিতে হবে ৩০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে দিয়েছে। আর এভাবে চলতে থাকলে চামড়া সংগ্রহ করা মানুষের আগ্রহ হারিয়ে যাবে। মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী দিলিপ বলেন, ১৫০ পিস ছাগলের চামড়া কিনেছিলাম। যেখানে লবণজাত করতে খরচ হয়েছে আড়াই হাজার টাকা। আড়তে বিক্রি করেছি ২ হাজার ২০০ টাকা।

আর খাজনা দিয়েছে ১৮০ টাকা। লাভ করতে এসে লোকসান করে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। চামড়া সংরক্ষণ করার উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে বিক্রি করতে হয়েছে। মহাদেবপুর উপজেলার চামড়া ব্যবসায়ী সাহাদত হোসেন বলেন, গত বছর প্রায় ১৩ লাখ টাকার চামড়া কিনেছিলাম, যা থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো লাভ হয়েছে। এ বছর প্রায় ৭ লাখ টাকার গরু ও ছাগলের চামড়া কিনেছি। এ বছর লবণ ও শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় চামড়া লবণজাত করতে খরচ বেশি পড়েছে। তারপরও লাভ থাকবে ইনশাআল্লাহ। চাকরাইল চামড়া আড়তের আহ্বায়ক ও জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন ঈদ পরবর্তী আড়ত হওয়ায় অনেকেই ব্যস্ত রয়েছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের বাড়িতে চামড়া লবণ দিয়ে মজুত করে রাখায় আড়তে চামড়া সরবরাহ কম হয়েছে। ঈদের পর আড়তে প্রায় ১৪ লক্ষাধিক টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। তবে আগামী বুধবার আড়তে চামড়া বেচাকেনা জমজমাট হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৫০ জন চামড়া ব্যবসায়ী আছে। কোরবানি ঈদ উপলক্ষ্যে আমরা নিজেরা এরই মধ্যে ৫০ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করেছি। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লবণ দিয়ে চাড়মা সংগ্রহ করে রেখেছে। কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের কাছে ওই সব চামড়া চলে আসবে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গরু ও মহিষের চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ হাজার পিস এবং ছাগল ও ভেড়ার চামড়া ১ লাখ পিস কেনা হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা। এসব চামড়া ট্যানারিতে হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেন, চামড়ার দাম ঠিক আছে। তবে যেসব চামড়া ছেঁড়া-কাটা রয়েছে সেগুলো কম। ছাগলের চামড়া বেশি কাটা-ছেঁড়া হয়। তবে ভালো চামড়ার দাম ভালো আছে। চামড়ার দাম অতিরিক্ত কম হওয়ার কারণে অনীহা রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত