ভারত ভ্রমণে বেনাপোলে যাত্রীচাপ

ইমিগ্রেশনে চরম ভোগান্তি

প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বেনাপোল প্রতিনিধি

ঈদ ঘিরে মিলছে টানা বেশ কয়েকদিনের ছুটি। এ সুযোগে অনেকে ভ্রমণ করছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। এতে যশোরের বেনাপোল চেকপোস্টে যাত্রীদের চাপ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেকটা বেড়ে গেছে। আবার একই সময়ে বেনাপোল দিয়েই অনেকে ভারত থেকে দেশেও ফিরছেন। তবে উভয় দেশের ইমিগ্রেশনে সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। সরজমি নিয়ে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীর চাপ সামলাতে নিরলসভাবে কাজ করছেন আনসারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সদস্যরা ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। ঈদের এই সময়টাতে ঘুরাঘুরির পাশাপাশি চিকিৎসা ও ব্যবসার কাজেও অনেকে ভারতে যাচ্ছেন। অনেকে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ কাটাতেও যাচ্ছেন। আবার অনেকে ঈদ ঘিরে বেনাপোল দিয়ে ফিরছেন বাংলাদেশে। তবে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও চেকপোস্টে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে হতাশা আর অসন্তোষ জানিয়েছেন যাত্রীরা। অভিযোগ রয়েছে দালালদের হয়রানির নিয়েও। বর্তমানে বেনাপোলে দুই পাশের ইমিগ্রেশনের কাজ সারতে যাত্রীপ্রতি প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশও করছেন যাত্রীদের অনেকেই। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সেবার মান বাড়াতে তারা কাজ করছেন। হয়রানি এড়াতে যাত্রীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর পর বন্দর কর্তৃপক্ষ মাইকে অ্যালাউন্স করছেন। বেনাপোল ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে প্রায় ৬০ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে ভারতে প্রবেশ করেছেন ৪২ হাজার ১৩৭ জন। আর ভারত থেকে ফিরেছেন ১৭ হাজার ৮৬৩ জন। প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ পাসপোর্টধারী যাতায়াত করেন। ভ্রমণ কর বাবদ বাংলাদেশ সরকারের বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার উপরে রাজস্ব পেয়ে থাকে ও ভিসা ফি বাবদ ভারত সরকারের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ওপরে আয় হয়। ভ্রমণের ক্ষেত্রে বছরে বছরে এ অর্থের পরিমাণ দুই দেশে বাড়ালেও সেবার মান বাড়ছে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। তারা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখন সকালের জায়গায় ভোর ৩টার মধ্যে বন্দরে ভিড়ছে দূরপাল্লার সব যাত্রীবাহী বাস। তবে যাত্রীরা দ্রুত পৌঁছালেও বন্দর সকাল সাড়ে ৬টায় খোলায় তাদের দীর্ঘসময় সড়কের ওপর লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে, তার ভেতরের রোদণ্ডবৃষ্টিতে যাত্রীদের ভিজতে হয়। তীব্র রোদে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পরছেন অনেকে। অন্যদিকে, ভারত অংশে জনবল সংকটের কারণে ইমিগ্রেশনে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন যাত্রীসেবা না দিয়ে বারবার বিএসএফের তল্লাশির কারণে দেরি হচ্ছে। ইমিগ্রেশনটা নিয়ন্ত্রণ করে পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়েছেন বিএসএফের কাছে। গত এক সপ্তাহ থেকে ভারতীয় নাগরিকরা বিজনেস ভিসা নিয়ে তাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ভারতীয় পাসপোর্ট যাত্রীরা। বেনাপোল নো-ম্যান্সল্যান্ডে শহিদুল নামে এক যাত্রী বলেন, এবার পরিবার নিয়ে ভারতে যাচ্ছি। কিন্তু এখানে ৬ ঘণ্টা তীব্র গরম আর রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। লাইন কমছে না। পেট্রাপোল চেকপোস্টে অফিসাররা ধীরগতিতে কাজ করায় সময়টা বেশি লাগছে। আর কত সময় লাগবে বলতে পারছি না। বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম বলেন, ঈদুল আজহার ছুটিতে এক সপ্তাহে প্রায় ৬০ হাজার পাসপোর্ট যাত্রী দু’দেশের মধ্যে আসা-যাওয়া করেছেন। তবে এবার রেকর্ড সংখ্যক যাত্রী যাতায়াত করেছেন। যাদের অধিকাংশই ঈদ উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটির কারণে ভ্রমণ ও চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছেন। ইমিগ্রেশন ওসি আরো বলেন পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনকে আমরা অনুরোধ করেছি দ্রুতযাত্রীদের নেওয়ার জন্য। বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম জানান, যাত্রীসেবার মান বাড়াতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষকেও সেবা বাড়াতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।