নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত
খাদ্য সংকটে বানভাসিরা
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
উজানের পাহাড়ি ঢল এবং বিরামহীন বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জ জেলা। এরই মধ্যে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটেছেন। তবে এবার বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া পশুখাদ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন গৃহপালিত পশুর মালিকরা। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও পুকুরের মাছ। শাল্লা উপজেলার বাসিন্দা হরিলাল দাস বলেন, ঘরের পানি কোমর সমান। পরিবারের সবাইকে নিরাপদে পাঠালেও ঘরের নিরাপত্তার স্বার্থে আমি বাড়িতেই অবস্থান নিয়েছি। প্রশাসন শুকনো খাবার দিয়েছে। এতে একবেলার আহার জুটেছে। সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার সাথে সাথেই খুলে দেওয়া হয় জেলার ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্র। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ১৯ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন এ সংখ্যা আরো বেশি। সময় যত যাচ্ছে, আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ত্রাণ সহায়তার কথা থাকলেও সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায় গতকাল পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা কাঞ্চনমালা বলেন, ভেজা কাপড়ে দিনযাপন করছি। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পাইনি। সবাই আসছে, দেখছে, চলে যাচ্ছে। সুনামগঞ্জ সদরের ইসলামপুরের বাসিন্দা লিয়াকত মুন্সি বলেন, সদর উপজেলায় আমাদের গ্রাম বেশি ক্ষতির মুখে। আমরা এখনো কোনো সহায়তা পাইনি। অনেকের ঘরে আজ অব্দি চুলা জ্বলেনি। কিছু প্রতিবেশীর দয়ায় খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। সবাই শহরের মধ্যে যাচ্ছে। আমাদের দেখার কেউ নেই। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের ১০টি উপজেলার ৪টি পৌরসভা ও ৭৪টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত। ১ হাজার ১৮টি গ্রামের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে সদর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার উপজেলা বেশি আক্রান্ত। গত বুধবার রাত থেকে জেলার শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় পানি বেড়েছে। এসব উপজেলায় রাস্তাঘাট, বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। জেলার মোট ৫৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবন, ব্যক্তিমালিকানা ভবনে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক যত সংঘটন খাবার বিতরণ করছে তারা সবাই শহর কেন্দ্রিক কাজ করছে। অথচ গ্রাম পর্যায়ে মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভারতের চেরাপুঞ্জি ও সুনামগঞ্জে অন্যান্য দিনের তুলনায় বৃষ্টি কম হওয়ায় শহরে পানি কমেছে। তবে শহরের পানি হাওরে প্রবেশ করায় গ্রামাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ নিচ্ছি। আমাদের উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সকল উপজেলার ইউএনওকে ইতিমধ্যেই অবগত করা হয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে নেত্রকোনার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে ক্রমাগত বাড়ছে বিভিন্ন নদনদীর পানি। ফলে বন্যার আশঙ্কা করছেন প্রশাসনসহ এলাকাবাসী। গত তিনদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার প্রধান প্রধান নদীগুলোর মধ্যে উব্দাখালী নদীর পানি কলামাকান্দায় বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এছাড়া জেলার প্রধান নদী ধনু-কংশ-সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে বলে জানিয়েছে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাসাবাড়ির আঙিনায় পানি উঠতে শুরু করেছ। এ ছাড়া গ্রামীণ সড়কে পানি উঠায় চলাচলে বেগ পেতে হচ্ছে। পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণ অব্যাহত থাকলে বসত ঘরে পানি উঠবে এবং সুপেয় পানি ও খাবার সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নেই পানি ঢুকেছে।
এর মধ্যে সদর, বড়খাপন ও পোগলা ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা ও কৈলাটি, রংছাতি ও খারনৈসহ বাকি ৫টি ইউনিয়নের কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুকনো খাবার, আশ্রয়কেন্দ্র, উদ্ধারকারী দল, মেডিকেল টিমসহ সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান কলমাকান্দা ইউএনও। এদিকে জেলার হাওর উপজেলা মদন মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরীর লোকালয়ে উজানের পানি ডুকতে শুরু করেছে। কলমাকান্দা ইউএনও আসাদুজ্জামান বলেন, কলমাকান্দা উপজেলা প্রশাসন যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।