ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তিস্তার পানিতে ডুবেছে কৃষকের স্বপ্ন

তিস্তার পানিতে ডুবেছে কৃষকের স্বপ্ন

‘চরের ১০-১২ দোন জমিত আবাদ করা সোগ (সব) বাদাম নষ্ট হয়্যা গেইছে। এ্যলাও পানির দেড়-দুই ফুট নিচোত বাদাম আছে। এই অবস্থায় বাদামচাষিরা সবশেষ (সর্বস্বান্ত)। বাদাম নিয়্যা খুব মসিবতে (কষ্টে) আছি। কিছু বাদাম তুলবার পারছি কিন্তু শুকাবার (শুকানো) পারছি না। এইবার বাদাম চাষ করতে অনেক পরিশ্রম করা লাগছে। খরার কারণে ক্ষ্যাতোত পানিও বেশি লাগছে। টাকা-পয়সা খরচ হইছে। তিস্তার পানিত হামার অনেক লোকসান।’ কথাগুলো বলছিলেন কৃষক ফয়জুর রহমান। তিনি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেব (বোল্ডারের মাথা) গ্রামের বাসিন্দা। ফয়জুর রহমান জানান, ঋণ করে এবার প্রায় ২৫০ শতক জমিতে বাদাম চাষ করেন তিনি। সেই বাদাম তুলে ঋণ পরিশোধ করাসহ বাড়ির কিছু কাজ আর নতুন ফসলের বীজ কেনার চিন্তাভাবনা ছিল তার মনে। কিন্তু হঠাৎ তিস্তায় হু হু করে পানি বাড়তে থাকায় তলিয়ে গেল তার বাদাম খেত। এদিকে তিস্তায় আকস্মিক পানি বৃদ্ধির ফলে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেব, গাবুড়ার চরসহ নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে নদীঘেঁষা ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের বেশকিছু চরসহ নিচু এলাকায় কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে আছে। এতে শুধু ফয়জুর রহমান নন, তার মতো কয়েকশ কৃষকের বাদাম এখন তিস্তার পানির নিচে। অনেকেই পানির নিচ থেকে বাদাম তুলে নৌকাযোগে নিয়ে আসছেন। এখন নদী তীরবর্তী প্রতিটি বাড়ির উঠানে বাদাম আর বাদাম। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিন উপজেলার গাবুড়া ও শিবদেব চর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নৌকা দিয়ে হাঁটু পানি থেকে বাদাম তুলছেন কৃষকরা। যে বাদাম এখন তোলা হচ্ছে তার আংশিক অপরিপক্ব। তবে পানির নিচে থাকায় পচন ধরার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাদামচাষিরা।

নদীরপাড়ে বসেই বালুমাখা বাদাম থেকে ভালো ও পরিপক্ব বাদাম আলাদা করছিলেন আবেদ আলী। আরো কয়েকজন তাকে এই কাজে সহযোগিতা করছিলেন। কিন্তু তাদের কারও মন ভালো নেই তিস্তার ভাঙন, বাঁকবদল আর স্রোতের কুল কুল শব্দে। পানিতে ভেজা বাদাম শুকানোর চেষ্টার কমতি নেই কারও। কিন্তু সূর্যের মুখ দেখা না যাওয়ায় ভেজা বাদাম রোদে শুকাতেও পারছেন না। তাই বেশির ভাগ বাদামে পচন ধরে বড় হচ্ছে নষ্ট বাদামের স্তূপ। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পীরগাছা উপজেলায় এ বছর ১৬৫ হেক্টর জমিতে বাদাম আবাদ করা হয়েছিল। এর মধ্যে তাম্বুলপুর ও ছাওলা ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বেশির ভাগ আবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানির কারণে হঠাৎ বন্যায় সে লক্ষ্যমাত্রা এবার অর্জিত হবে না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, পীরগাছা উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। তবে অনেকে আগে অন্য ফসল চাষ করে, তারপর চাষ করে বাদাম। প্রথমই বাদাম চাষ করা হলে পানিতে তলিয়ে যেত না। এদিকে কাউনিয়া উপজেলার তিস্তার তীরবর্তী গদাই গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় অর্ধশত বসতবাড়ি নদীর কিনারায় ভাঙনের মুখে রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে বাড়িগুলো নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। ফলে অনেকে বাড়ি ভেঙে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকে নিজ উদ্যোগে বস্তায় বালু ভরাট করে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। তাদের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তারা সরকারকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ নদীর দক্ষিণ তীরে সুরক্ষিত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, বন্যা মোকাবিলায় সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ জন্য মাঠ পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসনকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরে থাকা মানুষজনকে নিরাপদে থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত