কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় খেজুর

প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

আমাদের দেশি খেজুরের কদর নেই বললেই চলে। তবে, আগে দেখা যেতো এসব খেজুর পাকলে বিভিন্ন গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে এসে বিক্রি করা হতো। এখন এই দৃশ্য খুব একটা দেখা যায় না। তাই গাছে পেঁকে পড়ে নষ্ট হয়ে যায় এসব খেজুর। অত্যধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল এটি। এই ফলে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিনসহ স্বাস্থ্যকর নানা উপাদান। তবে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং গাছ থেকে রস বের করার ফলে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থেকে দিন দিনই হারিয়ে যাচ্ছে ফলটি।

এতে মৌসুমি এ ফলের উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা। ফুল শেষে শীতের শেষভাগে খেজুর গাছে ফল ধরে। কাঁচা অবস্থায় খেজুর ফলের রং সবুজ হয়, আর এ ফলটি পরিপক্ব হলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে। তারপর পাকা খেজুরের কাঁদি পানিতে কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে ফলটি নরম হয়ে খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। জানা গেছে, দেশি প্রজাতির মৌসুমি এই ফলে রয়েছে ক্যালসিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, আয়রন, ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ ও ‘কে’ সহ স্বাস্থ্যকর বিভিন্ন উপাদান। দেশি এই ফলটি মানবদেহের ঋতু পরিবর্তনকালীন রোগ প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর। তা ছাড়া এই ফল মানবদেহের রক্ত উৎপাদনে সহায়ক। হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে ও হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে, পাকস্থলী ও যকৃতের শক্তি বাড়াতে এ ফল কার্যকরী ভূমিকা রাখে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বছরই শীতকালে খেজুর গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করার কারণে অধিকাংশ গাছেই ফল আসেনি। এতে রসের চাহিদা মিটলেও দেখা দিয়েছে দেশীয় খেজুরের সংকট। ফলে দেশি খেজুরের পুষ্টিগুণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সিংহভাগ মানুষ। এ ছাড়াও এই উপজেলায় খেজুর গাছের সংখ্যাও আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। একসময় গ্রামীণ জনগোষ্ঠী শখ করে এ ফল গাছ রোপণ করলেও গত দেড় দশকে এই গাছ নতুন করে তেমন একটা রোপণ করা হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা। আর এ কারণেই দিন দিন এই গাছ উপজেলার প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা সামিয়ুল ইসলাম জানান, একসময় এই অঞ্চলে মৌসুমি ফল হিসেবে আম, কাঁঠাল, লিচুর মতো দেশি খেজুরেরও একটা আধিপত্য ছিল। দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাওয়া আর অপরিকল্পিতভাবে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কারণে এ ফলটির উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।

যে কারণে এ অঞ্চলে মৌসুমি ফল হিসেবে দেশি খেজুর সহজলভ্যতা হারাচ্ছে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. শঙ্খজিৎ সমাজপতি বলেন, দেশি খেজুর একটি মৌসুমি ফল। এ ফলে যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে। এই ফলে আছে নানাপ্রকার ভিটামিনস ও স্বাস্থ্যকর উপাদান। ফলটিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, সালফার, ফলিক অ্যাসিড, পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, সালফারসহ উপকারী নানা উপাদান। তবে বর্তমান সময়ে অন্যান্য মৌসুমি ফলের মতো এই ফলটি সচরাচর চোখে পড়ছে না। তিনি আরও বলেন, নতুন করে খেজুর চারা রোপণ করে প্রকৃতিতে এই গাছের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। আর যেসব গাছ আছে সেসব গাছের সবগুলো থেকে সমানে খেজুর রস সংগ্রহ না করে কিছু কিছু গাছ ফলের জন্য রাখা উচিত। এতে খেজুর রস ও খেজুর দুটোই পাওয়া যাবে।