নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় শীতলপাটির মূর্তার চাষ অনেকটাই কমে গেছে। এরফলে কাঁচামালের অভাবে পাটির কারিগররা পড়েছেন বিপাকে। বেড়েছে দামও। স্থানীয় ভাষায় এটি ‘মোতা’ নামে পরিচিত। মোতা চাষিকরণ চন্দ্র বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের নীলফামারী জেলায় এক সময় এই মোতার চাষ ছিল ঘরে ঘরে। মোট কথা বলতে ধরে নেন- যার ঘরত ১০০ শুটা মোতা থাকে, তায় মনে করে মোর ঘরত বা মাঁচাত ১০০ মণ ধান আছে।’
এক সময় পুরো নীলফামারী জেলায় এর চাষ হতো। আবার অন্যান্য উপজেলার তুলনায় কিশোরগঞ্জ উপজেলায় এ মোতার চাষ হতো বেশি। বর্তমানে এটি এ উপজেলায়ও বিলুপ্ত প্রায়। এক সময় প্রতিটি বাড়িতে তৈরি হতো এই মোতার শপ। দামও ছিল ভালো। সারাদিনে দুজন মিলে কমপক্ষে ৩টি শপ তৈরি করে বিকালে হাটে অথবা বাজারে বিক্রি করে চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য কেনা যেত সহজেই। বিশেষ করে জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত বৃষ্টির দিনে অন্য কোনো কাজ থাকে না। সে সময় এ এলাকার মানুষের একমাত্র আয়ের রাস্তা শুধু শপ। এটি তৈরি করে সেই আয়ের ওপর চলতে হয় তাদের। ছিট রাজীব গ্রামের মোতা চাষি ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘নীলফামারী জেলার মেয়ে ছওয়াল যে যে উপজেলাতে ছিল সেই সেই উপজেলাতে মোতার চাষ হতো। কিশোরগঞ্জ উপজেলার সউগ ইউনিয়নোত ছিল, মোতার আবাদ চোখে পড়ার মতো।’ তিনি দুঃখ করে আরো বলেন, মোতার শপের আবাদ করতে খরচ ও পরিশ্রম বেশি হওয়ায় কমে গেছে মোতার চাষাবাদ। মনে করেন একখান তে-হাতা শপ বানাইতে সময় লাগত ৩ ঘণ্টা। সেটা বেচে সংসারের সব খরচেই হতো। ব্যবসায়ী আ. রউফ বলেন, কিশোরগঞ্জ বাজারসহ আশপাশের বাজারগুলোতে শীতলপাটি মোতার শপের কদর ছিল প্রচুর। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে পাইকার এসে শীতল পাটি- মোতার শপ কিনে সারা দেশে সরবরাহ করত। এ পাটি ব্যবহার আরামদায়ক। চাষাবাদের অভাবে এ কৃষিপণ্য বিলুপ্তির পথে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষিবিদ লোকমান আলম বলেন, আমরা শীতল পাটি-মোতার শপ চাষিদের প্রশিক্ষণ ও ভর্তুকির মাধ্যমে এ কৃষিপণ্যের চাষাবাদ ধরে রাখার পদক্ষেপ নেব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম আশিক রেজা বলেন, যারা হস্তশিল্প হিসেবে শীতল পাটি- মোতা চাষে আগ্রহী তাদের তালিকা তৈরি করে সহযোগিতা করা হবে।