কেশবপুরের মৃৎশিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে

পেশা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পালরা

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)

যশোরের কেশবপুরে মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন কমে যাচ্ছে মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র। যে কারণে সংসারের ঘানি টানতে হিমশিম খাচ্ছেন মৃৎশিল্পের পরিবারের লোকজন। মৃৎশিল্পের জন্য এক সময় কেশবপুর উপজেলার সুনাম ছিল। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় বর্তমানে কেশবপুরের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন গ্রামের পাল বাড়িতে মৃৎশিল্প বিপন্ন হতে না হতেই ধীরে ধীরে প্রায় বিলুপ্তির পথে এই শিল্প। তাই বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত কুমার বা পালরা এ পেশা নিয়ে বেশ চিন্তিত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেশবপুরের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন গ্রামের পালবাড়িসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মৃৎশিল্প ছিল। মৃৎশিল্পীরা মাটির হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কোসন, ঢাকনা, কলসি, ছোট বাচ্চাদের খেলনা সামগ্রী, পেয়ালাসহ প্রভৃতি তৈরি করত। তাদের তৈরি পুতুল যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে নানা প্রতিকূলতা ও অভাব অনটনের কারণে যশোরের কেশবপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা, আলতাপোল, কন্দপপুর, বুড়িহাটি, বরণডালী, হাড়িঘোপ, ভেরচী, পাঁজিয়া, মঙ্গলকোটসহ বিভিন্ন গ্রামের পালবাড়ির মৃৎশিল্পীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী বাপ-দাদার আদি পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এ উপজেলায় প্রায় দুই শতাধিক মৃৎশিল্পী পরিবার রয়েছে। পাড়ার সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী। বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের রনজিৎ পাল, জয়দেব পাল, গৌতম পাল, দেবু নাথ পাল, রতন পাল, আলতাপোল গ্রামের, স্বপন পাল, অধির পাল জানান, কেউ প্রতিমা আবার কেউ ছোট হাঁড়ি তৈরি করেন। তাদের শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মান অনুন্নত। এখন মাত্র কয়েকটি পরিবারের কারিগররা বাপ-দাদার আদি পেশা কোনোমতে আঁকড়ে ধরে আছেন। তাদের পেশার দৈন্যদশার সঙ্গে সঙ্গে সংসার জীবনে বিরাট বিপর্যয় নেমে এসেছে। মাটির তৈরি জিনিসপত্রের স্থান দখল করে নিয়েছে অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র। অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের দাম বেশি হলেও অধিক টেকসই হয়। এজন্য সেটি বাজার দখল করে নিয়েছে। মাটির তৈরি জিনিসপত্র আগুনে পোড়ানোর কাজে ব্যস্ত দুই মৃৎশিল্পী। উপজেলার সুফলাকাটি ইউনিয়নের হাড়িয়াঘোপ গ্রামের নারাণ পাল বলেন, আমরা মাটি দিয়ে যেসব জিনিস বানায়, সেগুলো আর আগের মতো বেচতে পারি না। কি করব? অন্য কাম (কাজ) করতে পারি না। তাই বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃৎশিল্প আঁকড়ে ধরেই আছি। এখন আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। সেডা দেখার কেউ নেই। যার কারণে সংসারের ঘানি টানতে হিমশিম খাচ্ছেন এসব পরিবারের লোকজন। ২০-২৫ বছর আগে মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র কেশবপুর বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও বাজারে কদর ছিল বেশ। বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃৎশিল্পের কারিগর কার্তিক পাল বলেন, আমি এখন মৃত শিল্প তৈরির কাজ ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু, ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি জিনিসপত্রের দাম কম থাকায় এখন ধীরে ধীরে এই শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিলুপ্তির পথে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন কমে যাচ্ছে মাটির তৈরির বিভিন্ন জিনিসপত্র। কিন্তু খেজুরের রস ও গুড়ের জন্য এ উপজেলায় মাটির তৈরি ভাড়ের ব্যাপক কদর রয়েছে।

এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তুহিন হোসেন বলেন, বিলুপ্তপ্রায় এই শিল্পকে বাঁচাতে সব ধরনের সহযোগিতা আমার পক্ষ থেকে পাবে।

কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মফিজুর রহমান মফিজ বলেন, তারা আমার কাছে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পাবেন এবং তাদের পাশে তিনি থাকবেন বলে আশ্বাস দেন।