কুষ্টিয়ায় কোরবানির চামড়ার দাম নিয়ে হতাশা
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচএম আরিফ, কুষ্টিয়া
এবার কোরবানি ঈদে চামড়ার দরপতনে হতাশ কুষ্টিয়ার কোরবানির চামড়া বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। সম্ভবত এবারই প্রথম ব্যতিক্রম ঘটেছে কুষ্টিয়ার চামড়ার বাজারে। যারা পশু কোরবানি দিয়েছেন, তারা যেমন চামড়ার দাম পাননি, তেমনি ব্যবসায়ীরাও দাম পাচ্ছেন না। নিকট ভবিষ্যতে এমন অনিশ্চয়তা দেখে এখনই মাথায় হাত পড়েছে চামড়া ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে এবারের কোরবানির মৌসুমে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুঁজি সংকটে কুষ্টিয়ার অনেক আড়তদাররা চামড়া কিনতে পারছেন না। টেনারি মালিকদের কাছে টাকা বকেয়া থাকায় কর্মচারীদের বেতনও দিতে পারছে না তারা। এছাড়া চামড়া সংরক্ষণে কাঁচামালের অভাব তো রয়েছেই। এদিকে সাধারণদের অভিযোগ রয়েছে সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম একবারেই কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ওপর আবার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ইচ্ছামতো দামে চামড়া কিনেছেন। শহরের চামড়া পট্টি খ্যাত এস, বি লেনে অবস্থিত শতবছরের বেশি পুরাতন চামড়া বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কোরবানির গরুর প্রতি পিস ছোট চামড়ার দাম ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা, মাঝারি আকারের প্রতিটি চামড়া ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা এবং বড় চামড়া ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর বকরির চামড়া ২০ টাকা ও খাসির চামড়া ৬০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে এ দাম গত বছরের তুলনায় অর্ধেক। এগুলো ছিল কাঁচা চামড়া। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এমন দামে কেনার পরও চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণের পর যা খরচ পড়বে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করতে গেলে তার পুঁজিই উঠবে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, ঢাকার বাইরে গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। খাসির কাঁচা চামড়ার দাম সারাদেশে ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির কাঁচা চামড়ার দাম হবে সারাদেশে ১৩ থেকে ১৫ টাকা। কিন্তু এমন বক্তব্যের বিরুদ্ধে কোরবানির চামড়া বিক্রেতারা। তাদের অভিযোগ সিন্ডিকেট করেই দাম কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। তারা বলেন, চামড়া সব কিছুরই দাম উচ্চমূল্যে, শুধুমাত্র কোরবানির চামড়া বিক্রয়ের সময় পরিবহন ব্যয়ও উঠছে না সাধারণ মানুষদের। তাই চামড়া বিভিন্ন এতিমখানা কিংবা মাদ্রাসায় দান করার পরও তারা বিক্রয় করতে ভয় পাচ্ছে। অভিযোগের সুরে মাসুদ নামে এক বিক্রেতা জানালেন, একটি মাজার বেল্ট কিনতে গেলেও সর্বনিম্ন পাঁচশত টাকা গুনতে হয় আর ৬০ টাকায় বিক্রয় করতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকা মূল্যের খাসির চামড়া। তিনি এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে বলেছেন। কুষ্টিয়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও শহর যুবলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক আনিস কোরাইশী বলেন, এবার আমাদের চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল গরুর চামড়া ১ লাখ ও খাসির চামড়া ২ লাখ। কিন্তু এখন পর্যন্ত চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৫ থেকে ৩০ ভাগ পুরণ হয়েছে। মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ এমনকি যশোর জেলার চামড়াও কুষ্টিয়ার বাজারে আসে। এখান থেকে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে পাঠানো হয়। অথচ এবার চামড়ার বাজারে ধস ও আর্থিক সমস্যার কারণে চামড়া কিনতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া কর্মী ও কাঁচা মালের সংকট তো রয়েছেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ীদের টাকা বকেয়া রেখেছে। বকেয়া পাওনা রয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। যার কারণে স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরাও কর্মচারীদের বকেয়া পরিশোধ করতে পারেনি। সবমিলিয়ে কুষ্টিয়ার চামড়া ব্যবসায়ীরা ব্যাপক পুঁজি সংকটে রয়েছেন। ৪৫-৫০ জন ব্যবসায়ী থাকলেও অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ট্যানারি ও বড় বড় চামড়ার আড়তে বাকিতে মাল দিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বকেয়া টাকা কবে নাগাদ ফেরত আসবে তারও নিশ্চয়তা নেই। পুঁজি হারিয়ে অনেকে এরইমধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কুষ্টিয়ার মাসুদ মিয়া নামে এক বড় ব্যবসায়ীর ঢাকার ক্রিসেন্ট ট্যানারি মালিকের কাছে ৭ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। অথচ অর্থের অভাবে তিনি এবার ব্যবসা করতে পারেননি। তার মতো অনেকেই কোনো রকমে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে সন্তুষ্ট নন। আর এবার যা অবস্থা তাতে চামড়ার দাম পাওয়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন এ অঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে সিন্ডিকেট করে কম দামে চামড়া কেনা হচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি বলেন, অন্য যে কোনো জেলা থেকে আমাদের এখানে বেশি দামে কোরবানির চামড়া বিক্রি হয়েছে। যদিও আমাদের ক্ষতি হবে। সুতরাং সিন্ডিকেট অভিযোগ ভিত্তিহীন। পাচারের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, চামড়া এখন আর বাইরে পাচার হয় না। এর কোনো সম্ভাবনা নেই।