আবারও ফেনীতে ভুল এনেস্থেসিয়ার কারণে স্বয়ং একজন মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঘটনাটি গত শুক্রবার রাতে ঘটলেও ফেনী প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন করে মিডিয়া এড়িয়ে চলে। একপর্যায়ে জানাজানি হলে সর্বমহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া নিজ জন্মভূমি হলেও ঢাকাতেই বসবাস করতেন ডা. আকিফা সুলতানা টুম্পা। একমাত্র অবলম্বন কন্যাকে হারিয়ে তার বয়স্ক পিতা এখন কান্নায় বুক বাসাচ্ছেন। রোগীর স্বজন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে ফেনীতে ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি করতে আসেন আকিফা সুলতানা টুম্পা নামেক একজন চিকিৎসক। এসে শারীরিক জটিলতা এবং মৃত্যুর ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সিভিল সার্জন অফিস। গত শুক্রবার রাতে ফেনী প্রাইভেট হাসপাতালে ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি করতে এনেস্থেসিয়া প্রয়োগের পর ডা. আকিফা সুলতানা টুম্পা নামে এক নারী চিকিৎসকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরবর্তীতে তাকে চট্টগ্রাম এবং সেখান থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান ওই চিকিৎসক। প্রতিষ্ঠানটি ল্যাপারোস্কপিক সার্জন প্রফেসর ডা. কাইয়ুমের ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ফেনী প্রাইভেট হাসপাতাল। অভিযোগ ওঠে চট্টগ্রামের ডা. আবদুর রহমান নামে ফেনীর বাইরে থেকে আসা একজন এনেস্থেসিওলজিস্ট রোগীকে এনেস্থেসিয়া প্রয়োগ করেই প্রথমে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে আবার চেষ্টা করলে ডা. আকিফা সুলতানার ক্রমেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। খবর পেয়ে তার সহকর্মী ফেনী সদও হাসপাতালের আরএমও ডা. আসিফ ইকবাল, ডা. নিলুফা সুলতানা, ডা. আরিফুর রহমান অনেক চেষ্টা করলেও তার পেশার না বাড়ায় ফেনী আধুনিক জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করান। যত সময় যাচ্ছে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না দেখে ডা. আকিফার স্বজনরা তাকে চট্টগ্রাম এভার কেয়ার হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানেও আবস্থার উন্নতি না হওয়ার ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয় ডা. আকিফার। এ ঘটনায় ডাক্তারদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিষয়টি জানাজানি হলে চিকিৎসক ও ডা. আকিফা সুলতানার স্বজনরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের নির্দেশে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন। চিকিৎসকের এ মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে গত রোববার ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সিভিল সার্জন অফিস। সিভিল সার্জন অফিসের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গঠিত কমিটিকে ৫ দিনের মধ্যে সিভিল সার্জন বরাবরে তদন্ত প্রতিবেদন প্রতিবেদন দাখিল দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটিতে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. জালাল হোসেনকে সভাপতি করা হয়েছে। এছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী) ডা. মো. কামরুজ্জামান, দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল ইসলাম, ফেনী জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. তাহিরা খাতুন ও জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেস্থেসিয়া) ডা. মো ইলিয়াছ ভূঞা। এ বিষয়ে কথা বলতে ফেনী প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক প্রফেসর ডা. কাইয়ুম সাহেবকে বার বার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. শিহাব উদ্দিন জানান, ফেনীতে ল্যাফারস্কোপিক আপারেশন করতে আসা ডা. আকিফা সুলতানা টুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় আমি ব্যথিত ও মর্মাহত বলে জানান। এ ঘটনায় ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট আসলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানান।