চাঁপাইনবাবগঞ্জে যত্রতত্র বেড়ে উঠছে বিষাক্ত আগাছা পার্থেনিয়াম। শরীরে এর ছোঁয়া লাগলে হতে পারে দুরারোগ্য চর্মরোগ। এর ফুলের রেণু শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে ঢুকলে হতে পারে শ্বাসকষ্ট। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে এটি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। পার্থেনিয়াম ভক্ষণকারী গবাদিপশুও পড়তে পারে মৃত্যুঝুঁকিতে। এর ক্ষতির দিকগুলো নিয়ে যাদেরই সচেতন করার কথা, খোদ সেই সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পেছনই জন্মেছে বিষাক্ত এ আগাছা। প্রাণঘাতী বিষাক্ত এই আগাছা জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের অফিসের পেছনের বাগানে জন্মে বছরের পর বছর। ধনিয়া গাছের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ আগাছাটি যত্রতত্র জন্মানোয় মানুষ ও গবাদিপশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। তবে বিষাক্ত পার্থেনিয়াম আগাছা সম্পর্কে কৃষি কর্মকর্তারা জানলেও এই বিষয়ে অবগত নন সিভিল সার্জন। সরজমিনে দেখা গেছে, জেলা সিভিল সার্জন, জেলা নির্বাচন, গণপূর্ত বিভাগ ও ভূমি অফিস এই চারটি সরকারি প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি। এসব অফিসের পেছনেই আছে সরকারি একটি আম বাগান। আছে সরকারি বাসভবনও। আর এই বাগানেই জন্মেছে বিষাক্ত পার্থেনিয়াম। এরই মধ্যে এই আগাছায় ফুলও ফুটেছে। সাধারণ মানুষের যাতায়াতের পাশাপাশি এ বাগানে চরে বেড়ায় গবাদিপশু। ফলে উভয়ের রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা। এছাড়া জেলার বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার দুধারে, বাড়ির আঙিনায় ও কৃষিজমির আলে, পরিত্যক্ত কৃষি ও অকৃষি জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে পার্থেনিয়াম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় হলুদ, আদা, কলা, দেশীয় শিম, আমের বাগান ও মটর খেতকে আক্রান্ত করছে আগাছাটি। এর অ্যালিলোপ্যাথিক যৌগগুলোর মাধ্যমে বেগুন, টমেটো, মরিচ ইত্যাদির পরাগায়ন কমিয়ে ফেলে। গম, ভুট্টা, মরিচ, শিম, টমেটো ও বেগুনের ফল ও দানার গঠন এ আগাছার আক্রমণে ব্যাহত হয়। শিরাযুক্ত, নরম কাণ্ডবিশিষ্ট একবর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। আগাছাটির উৎপত্তি উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার সাব ট্রপিক্যাল অঞ্চল, মেক্সিকো ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে। বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশে এটি ছড়িয়ে পড়েছে। এদেশে ছড়িয়ে পড়া পার্থেনিয়ামের বৈজ্ঞানিক নাম Parthenium hysterophorus। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এর ১৬টি প্রজাতির মধ্যে এটিই সবচেয়ে বিষাক্ত উদ্ভিদ। বাংলাদেশে এটি ‘নাকফুল’ হিসেবে পরিচিত। পার্থেনিয়ামের তথ্যানুসন্ধানে ২০১৪-১৭ সাল পর্যন্ত দেশের ৩৫টি জেলায় জরিপ চালানো হয়।