দেওয়ানগঞ্জের বরখাল এলাকায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যমুনা নদীতে তীব্রভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি, জেলেপল্লি, ফসলি জমি ও একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আগে থেকেই ব্যবস্থা না নেওয়ায় পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে জমি-জমা ও বসতভিটা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙন রোধে নদী তীর সংরক্ষণের জন্য সমীক্ষা চলছে। এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, নদী তীর রক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে জরুরিভিত্তিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, যমুনা নদীতে পানি বাড়ায় জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বরখাল, মাঝিপাড়া, খোলাবাড়ি, খাঁনপাড়া ও চরডাকাতিয়া গ্রামের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে ভাঙন তাণ্ডব। ভাঙনের মুখে পড়েছে শত শত ঘরবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বরখাল এলাকায় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ বলছেন, শুকনো মৌসুমে ভাঙন রোধে কোনো কাজ করে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। তীব্র নদীভাঙন দেখা দিলে সেখানে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। তাই এখানে স্থায়ী নদী শাসন চান এসব ভাঙাকবলিত এলাকার মানুষ। বড়খাল এলাকার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বড়খাল থেকে খোলাবাড়ি পযর্ন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ সব কিছুই হুমকির মুখে রয়েছে। এরইমধ্যে অনেক স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত বছর ভাঙনের সময় এখানে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল যা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। বড়খাল মাঝিপালা এলাকার সত্তোরোর্ধ পারুল বানু জানান, বৃদ্ধ স্বামী ও প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে তার সংসার। ভাঙন কবলে পড়ে এর আগেও বসতভিটা হারিয়েছেন কয়েকবার। সবশেষ ঠায় হয়েছে বড়খাল মাঝিপাড়ায়। কিন্তু বর্ষার শুরুতেই এই এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। তাই মাথার গোঁজার শেষ ঠাঁইটুকু চলে গেলে বৃদ্ধ স্বামী ও প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে কোথায় আশ্রয় নেবেন সেই চিন্তায় বিভোর তিনি। স্থানীয় আমিনুল ইসলাম জানান, শুকনা মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ড এখানে কোনো কাজ করে না। যখন নদীতে প্রবল ভাঙন দেখা দেয়, তখন কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়, যা আমাদের কোনো কাজেই আসে না। তাই এখন এলাকা বাঁচাতে হলে স্থায়ী একটি বাঁধের প্রয়োজন। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স জানান, ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পটির সমীক্ষা চলমান রয়েছেন বলে জানান তিনি। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ভাঙন এলাকায় প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবনা রয়েছে। প্রস্তাবনাটি অনুমোদন হলে এই এলাকায় জরুটি প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।