উখিয়াবাসীর সরকারি চিকিৎসাসেবা নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কারণে হতাশা দেখা দিয়েছে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে। রোহিঙ্গা সংকটে স্থানীয়দের জন্য বিশ্বব্যাংকের বরাদ্দ অর্থে স্বাস্থ্য বিভাগে এনজিও নিয়োগপ্রাপ্ত ৯২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকছে না জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় গত রোববার শেষ হয়েছে এনজিও অধীনে বাস্তবায়ন করা এসব প্রকল্প। এ নিয়ে উখিয়া উপজেলা ব্যাপী চিকিৎসা সেবায় বিপর্যয়ের শংকা তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের ‘স্বাস্থ্য ও জেন্ডার সাপোর্ট প্রকল্প (এইচজিএফপি), স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ সহায়তা প্রকল্প (এইচজিএস) অধিনে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন এনজিও সংস্থা জেলা ও উপজেলা ব্যাপী হাসপাতাল, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জনবল নিয়োগসহ নানা সহায়তা করে আসছে। ২০১৯ সালে শুধু হওয়া এসব প্রকল্প ৩০ জুন অর্থ বরাদ্দ না থাকায় জনবল প্রত্যাহারের চিঠি প্রদান করেছে। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সরকারের নানা পর্যায়ে চিঠি প্রেরণ করে জানানো হয়। ফলে উখিয়া উপজেলাবাসীর চিকিৎসা সেবা নিয়ে তৈরি হয়েছে শংকা। তবে এই প্রকল্প বন্ধ হলেও বিশ্বব্যাংকের অধীনে এসব প্রকল্প আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএসও বাস্তবায়নের জন্য আগামীতে চুক্তি হচ্ছে। ফলে, জুনায়ারি ২০২৫ সাল থেকে আইএসও জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এসব প্রকল্পের দায়িত্ব পাবেন এবং এটি ধারাবাহিক থাকবে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগে সরকারিভাবে নিয়োগ করা জনবল ছাড়াও বিশ্বব্যাংকের অধীনে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সেন্টমার্টিন হাসপাতাল, জেলার ৭২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এই সাড়ে ৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করছেন। এরই মধ্যে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ১৯৯ জন, উখিয়া হাসপাতালের ৯২ জন, টেকনাফ হাসপাতালের ৮০ জন, সেন্টমার্টিন হাসপাতালের ১৬ জন, পেকুয়া হাসপাতালে ৫২ জন, চকরিয়া হাসপাতালে ৪৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালনের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া ৭২টি ইউনিয়ন হাসপাতালে ৩ শতাধিক কর্মী দায়িত্ব পালন করছেন। উখিয়া হাসপাতালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পদায়ন করা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ৯২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী না থাকলে হাসপাতালটি ভর্তি রোগী, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসাসেবায় বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা করছে স্বয়ং হাসপাতালটি চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা। তৎ মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মোট ১২ জন চিকিৎসক রয়েছেন। এছাড়া রয়েছেন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট, নার্স ও মিডওয়াইফ ১২ জনসহ ৯২ জন স্টাফ থাকবে না।
শুধু তা নয়, এই বিশাল জনবল শূন্যতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত সিজার বিভাগের সেবাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের মতে, প্রতিদিন গড়ে প্রচুর রোগীকে বর্তমানে হাসপাতালে মানসম্মত চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়, সীমিত সংখ্যক চিকিৎসক বা জনবল দ্বারা এই চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা কঠিন। সরকারি চিকিৎসাসেবা শতভাগ সরকারের অধীনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বরাদ্দ অর্থের ২৫ শতাংশ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর। এই অর্থ সরাসরি সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের জমা হবে। সরকারই বাস্তবায়ন করবে জনবল নিয়োগসহ সব কার্যক্রম। এখানে আন্তর্জাতিক বা দেশীয় এনজিওর অধীনে তা বাস্তবায়ন করা যাবে না। এতে এনজিওর উপর নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে। এটা দেশের জন্য শুভকর না। এ বিষয়ে সুজন সভাপতি সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার জানান, সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগ বা চিকিৎসাসেবা কেন এনজিওর প্রকল্পের উপর নির্ভর করবে। শতভাগ সরকারি জনবল নিয়োগ, অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। এদেশের নাগরিকরা সরকারিসেবা গ্রহণ করবেন। তবে কোনো রোহিঙ্গাকে যেন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা না দেওয়া হয়, এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থা করতে হবে রোহিঙ্গাদের জন্য।
উখিয়া উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রঞ্জন রড়ুয়া জানান, সব সময় এনজিওর উপর নির্ভরশীলতা থাকছে না। এটা কেটে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের অধীনে আইএসও চুক্তি হচ্ছে। জানুয়ারি থেকে এই চুক্তি। এটা হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা আইএসও’র মাধ্যমে। ফলে উখিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম দ্রুত আবারো পুরো দমে শুরু করা যাবে। স্বল্প জনবল নিয়ে হলেও আমরা চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যাতে স্থানীয় মানুষ সঠিক চিকিৎসা পায়।