সাটুরিয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৭ ঘরের ১৪টিই ফাঁকা
ঘরে ওঠেনি উপকারভোগীরা
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মো. খোকন সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
সারি সারি আধা পাকা ১৭টি ঘর। প্রতিটি ঘরে রয়েছে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি শৌচাগার। রয়েছে বিদ্যুৎ আর সুপেয় পানির ব্যবস্থাও। কিন্তু সেখানের অধিকাংশ ঘরই ফাঁকা পড়ে আছে। এটি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার খলিশাডহুরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের চিত্র। সেখানের ১৭টি ঘরের মধ্যে ১৫টিই ফাঁকা পড়ে আছে। অভিযোগ উঠেছে, সঠিক বিবেচনায় ঘরগুলো বরাদ্দ না দেওয়ার ফলে বেশিরভাগ সুবিধাভোগী বরাদ্দ পাওয়া ঘরগুলোতে থাকছে না। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার খলিশাডহুরা এলাকায় ২০২০-২১ অর্থবছরে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৭টি ঘর নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের কয়েক মাসের মধ্যে ঘরগুলো বরাদ্দপ্রাপ্তদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল দুপুরে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, ১৭টির মধ্যে মাত্র তিনটি ঘরে বসবাস করছে মানুষ বাকি ১৪টি ঘরেই তালা ঝুলছে। ঝোপঝাড়ে ঘিরে ধরেছে ফাঁকা ঘরগুলো। বারান্দা ও আশপাশে জমে রয়েছে ময়লা আবর্জনা। সাটুরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক কর্মসূচি আশ্রয়ণ প্রকল্প ২ এর আওতায় খলিশাডহুরা এলাকায় ১৭টি ঘর নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের কয়েক মাসের মধ্যে বরাদ্দপ্রাপ্তদের মাঝে ঘরগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘরেই দুইটি কক্ষ একটি রান্না ঘর ও একটি টয়লেট নির্মান করে দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘর তৈরিতে সরকার থেকে বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা। ১৭টি ঘরের বরাদ্দপ্রাপ্তদের তালিকা সংগ্রহ করে দেখা গেছে, যাদের নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে তারা প্রকল্প এলাকা থেকে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে বালিয়াটি ইউনিয়নের বালিয়াটি, হাজীপুর ও খলিলাবাদ গ্রামের বাসিন্দা। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশপাশে ভূমিহীন থাকলে তারা পায়নি ঘর বরাদ্ধ। আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে একটি কৃষি খামারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে ৬০ বছর বয়সি সুজাত কথা হয় তার সাথে, তিনি বলেন নদীতে ঘরবাড়ি হারিয়ে গত দুই যুগ ধরে বরাইদে আত্মীয়ের বাড়িতে বসবাস করছে বছর দেড়েক আগে মেয়ের জামাই সুজন ৪ শতাংশ জমি কিনেছে আশ্রায়ণ প্রকল্পের পাশে, সেখানে ঘর তুলে বসবাস করছে সে। সম্প্রতি তাকে একটি ঘর দেওয়া হয়েছে শুনেছে কিন্তু ঘর তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় নি। আরেক জন আব্দুল বারেক (৫৮) আশ্রায়র প্রকল্প যে জমিতে হয়েছে সে খাস জমিতে তার ঘর ছিল। প্রকল্প করার সময় তাকে একটি ঘর দেবার কথা বলা হলেও সে পায়নি ঘর। আব্দুল বারেক জানায়, ১৭ ঘরের ১৪টি ঘরে বরাদ্দ পেয়েছে যারা তারা সেখানে থাকে না। বরাদ্দ প্রাপ্তদের ঘরগুলোতে না থাকায় ঘর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরের জন্য জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে নানা জায়গায় ঘুরেছে দিনের পর দিন, কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘর পাননি। উপজেলায় অব্যবহৃত ঘর বরাদ্ধ চেয়ে লিখিত আবেদন করে রেখেছে ৬ মাস পূর্বে সম্প্রতি তাকে জানানো হয়েছে ঘর দেওয়া হয়েছে কিন্তু ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয় নি। তাদের মতোন খলিশাডহুরা আশ্রয়ণ প্রকল্পর পাশে অন্যের বাড়িতে বসবাস করা আরো কয়েকজন আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘর পাননি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২নং ঘরে থাকা পাপন খান জানায়, বরাদ্ধ পাওয়ার পর সে ঘরে উঠেছে। ১৭ ঘরের মধ্যে ১৫টি ঘরে কেউ থাকেই না। যারা বরাদ্ধ পেয়েছে তাদের বাড়ি প্রকল্প এলাকা থেকে অনেক দুরে। বরাদ্ধ প্রাপ্তরা তাই ঘরে ওঠেনি। ঘরগুলো খালি পড়ে আছে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হস্তান্তরের পর থেকে সেগুলো খালি পড়ে রয়েছে। দু-একটি ঘরের লোকজন মাঝে মাঝে এসে ঘর পরিষ্কার করে চলে যায়। কয়েকটি ঘরে তো কেউ বরাদ্দ পাওয়ার পর আসেনি। বরাদ্দ পাওয়া কয়েকজন জানায়, তারা কাজ অথবা ব্যবসা করে সাটুরিয়া ও বালিয়াটি এলাকায়। প্রতিদিন কাজ করে ১৪ কিলোমিটার দূরে থেকে আসা-যাওয়া করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে থাকা তাদের জন্য সম্ভব না। তাই তারা বরাদ্দ পাওয়ার পরেও সেখানে যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, বরাদ্দ পাওয়ার পর জমি সহ ঘর বিক্রি করার পরিকল্পনা করে অনেকেই টাকার বিনিময়ে ঘর বরাদ্দ নিয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়ার পর তা বিক্রি করতে না পেরে জমিসহ ঘর ফেলে রেখেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রমজান আলী বলেন, স্থানীয় অনেক ভূমিহীন থাকলেও তাদের ঘর বরাদ্ধ না দিয়ে অন্য ইউনিয়নের লোকজনকে ঘর বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। অন্য এলাকার লোকজন ঘর গুলোতে থাকছে না। সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শান্তা রহমান বলেন, খলিশাডহুরা এলাকায় আশ্রয়ন প্রকল্পের যে ঘর গুলোতে বরাদ্দপ্রাপ্তরা থাকছে না তাদের বিষয়ে খোজ নিতে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাটুরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমদ বলেন, খলিশাডহুরা এলাকায় আশ্রয়ন প্রকল্পের যে ঘর গুলোতে বরাদ্দপ্রাপ্তরা থাকছে না ক তাদের বিষয়ে খোজ খবর নিচ্ছি। কি কারণে তারা থাকছে না, তাদের সাথে কথা বলে তারা না থাকতে চাইলে অন্য ভূমিহীনদের ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া হবে।