ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পুলিশের আগ্রহ নেই চুরির মামলা নেওয়ায়

উদ্ধার-আটকে নেই সাফল্য
পুলিশের আগ্রহ নেই চুরির মামলা নেওয়ায়

চুরির ঘটনায় মামলা না নিয়ে কৌশলে অভিযোগ আদায় করে দায় সারছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ। অভিযোগগুলো মামলা হিসেবে খুবই নগণ্য রেকর্ড হলেও মাসের পর মাস সুরাহা হয় না অনেক চুরির ঘটনাই। ভুক্তভোগীরা বলছেন. চুরির ঘটনায় মামলা হলে খোয়ে যাওয়া মালামাল উদ্ধারে তৎপর হয় পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনা ধামাচাপা দিতে পুলিশ চুরির বিষয়টি মামলা হিসেবে নিতে চায় না। কারণ চুরির মামলা নিলে সেটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির রেকর্ডে নথিভুক্ত এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে। তাই পুলিশ কৌশলে চুরির ঘটনা মামলা হিসেবে নিতে চায় না। অভিযোগ গ্রহণের পর তদন্তের নামে চলে টালবাহানা। করা হয় সময়ক্ষেপন । জানা গেছে- গত রোববার ভোরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পাঠানপাড়ায় একটি বাড়িতে গৃহবধূকে কুপিয়ে জখম করে স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। এতে থানায় অভিযোগ করেন ওই বাড়ির মালিক দুরুল হোদা। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, দুটি মোবাইল ফোন, দুটি স্বর্ণেরও চেন ও একটি আংটি নিয়ে যায় চোররা। এতে তার প্রায় ২ লাখ সাড়ে ৮৫ হাজার টাকার মালামাল চুরি যায়। কিন্তু চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাতেও মামলা নিতে গড়িমসি করছে পুলিশ- এমন অভিযোগও আছে। ভুক্তভোগী দুরুল হোদা বলেন, চুরির ঘটনায় থানা একটি অভিযোগ করি। পুলিশ আমার বাড়ি ঘুরে গেছে। চুরির সত্যতাও পেয়েছে। অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হলে চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধার হওয়ার খুবই সম্ভাবনা ছিল। এখন অভিযোগটি মামলা হয়েছে কি-না আমার জানা নেই। মামলা হলে আমাকে নিশ্চয় জানানো হতো। অন্যদিকে, চলতি বছরের ২৮ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নয়াগোলায় একরাতেই পাশাপাশি চারটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। ওই চুরির ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় আলাদা আলাদা অভিযোগ দেন। অভিযোগকারীরা হলেন- নয়াগোলার মোহাম্মদ আলী, আবু সুফিয়ান, আবু রায়হান ও জাহিদ হোসেন। চুরির ঘটনায় ৯ দিন পার হলেও তার অভিযোগটি তদন্ত ছাড়াই পড়ে আছে।

ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলী জানান, তার বাড়ি থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা চুরি হয়। ঘটনার পরের দিন তিনি থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু ওসি তাকে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শ অনুযায়ী লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। তিনি বলেন, অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সদর থানার এসআই শরিফুল ইসলামকে। তাকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও ওই এসআই কোনো সাড়া দেননি। এমনকি তদন্তের জন্যও আসেননি। তার অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ডও হয়নি। একরাতে ৪টি বাড়িতে চুরির ঘটনার ঘটনার সত্যতা আছে বলে মনে করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি তদন্ত করে এসেছি। ঘটনার সত্যতাও পেয়েছি। কিন্তু এরপরও কেন মামলা হলো না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আমার কাজটুকু করেছি। মামলা হবে কি-না, সেটা ওসি স্যার দেখবেন। এছাড়া, প্রায় ৬ মাস আগে সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের তাহেরপুর-বালুগ্রাম থেকে আব্দুল আহাদ নামে এক ব্যক্তির একটি গরু চুরি হয়। গত ১৩ জানুয়ারি আব্দুল আহাদ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। তার অভিযোগেরও শেষ পর্যন্ত মামলা হয়নি। আব্দুল আহাদ বলেন, ঘটনার পর পুলিশের এক কর্মকর্তা আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর আর অগ্রগতি নেই। আমার অভিযোগটি কি হয়েছে জানি না। তবে সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হলে কোনো একটা সুরাহা হতো। চুরির ঘটনায় মামলা না নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. মেহেদী হাসান কোনো সদুত্তর দেননি। তবে তিনি বলেছেন- ‘নতুন ওসি তো সব কিছু বোঝে ওঠতে সময় লাগবে।’ চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মো. নূরুজ্জামান বলেন, চুরির শিকার ব্যক্তি চাইলে সরাসরি মামলা দায়ের করতে পারবেন। কিন্তু কেন চুরির ঘটনায় মামলা না নিয়ে শুধু অভিযোগ নেওয়া হয় তা আমার জানা নেই। ওসির কাছে বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

যা বলছেন আইনজীবীরা : অ্যাডভোকেট এম. আব্দুস সালাম বলেন, কোনো ভুক্তভোগী যদি অপরাধীর পরিচয় শনাক্ত করতে পারেন তাহলে তার বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা করতে পারবেন। এছাড়া যদি অপরাধীকে চিহ্নিত না করা যায়, সেক্ষেত্রে থানায় অভিযোগ করতে হবে। অভিযোগটি তদন্ত করে সত্যতা পেলে থানায় মামলা হিসেবে রেকর্ড হবে। ৯০ দিনের মধ্যে চুরির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করতে হবে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে। তিনি আরো বলেন, কাজ ফাঁকি দিতে পুলিশ চুরির ঘটনায় অভিযোগগুলো মামলা হিসেবে রেকর্ড করেন না। কারণ মামলা রেকর্ড হলে পুলিশকে এক সময় মামলাটি নিষ্পত্তি দেখাতে হবে।

থানায় দাখিল করা অভিযোগগুলো কোনো কাজেরই নয় বলে জানিয়েছেন মানববাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন মেহেদী। তিনি বলেছেন, ভুক্তভোগী চাইলে সরাসরি থানায় মামলা করতে পারবেন। চুরির অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে মামলা রেকর্ড করলে খোয়ে যাওয়া মালামাল উদ্ধারে তৎপর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে পুলিশের। যদি কোন ভুক্তভোগী যথেষ্ট প্রমাণ নিয়ে আমাদের দ্বারস্থ হয় তাহলে তাদের আইনি সেবা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত