ঢাকার ধামরাইয়ে মাটিকাটার ভেকুর ব্যাটারি চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে অফিসের ভেতরে আটকিয়ে নির্যাতন ও কারেন্টে শর্ট দেওয়ায় ফজল হক ফজু নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল স্থানীয় মেম্বারসহ আটজনকে আসামি করে ধামরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন মৃতের মা আছিয়া বেগম। এ ঘটনায় আব্দুল মান্নান নামে আরেক জনকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত শনিবার দিনগত রাত ১০টার দিকে ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের বাউখন্ড গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। আসামিরা হলেন, আমতা ইউনিয়নে ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার আলকেছ আলী, আমতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর হোসেন পিতা শাজাহান, মো. আলতাব হোসেন পিতা শামছুল হোসেন আমতা ইউনিয়নের নয়াচর গ্রাম, মো. আলামিন, ছোট আলামনি, মো. আইয়ুব আলী, মো. রতন মিয়া, মো. শফিকুল ইসলাম এরা সবায় আমতা ইউনিয়নের নান্দেশ্বরী গ্রামের বাসিন্দা। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আমতা ইউনিয়নের নান্দশ্বরী গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী আলকেছ মেম্বার, মীরহোসেন, আলামিনম আলতাব হোসেন, আইয়ুব আলী, রতন ও শফিকুল মিলে ব্যবসা করছে। রাতের বেলায় মাটি কাটার ভেকু রেখে সবায় বাড়ি চলে যায়। সেই রাতেই গত স্পতিবার মাটিকাটার ভেকু থেকে ব্যাটারি চুরি হয়। শনিবার বেলা ১২টার দিকে মানিকগঞ্জে সেই ব্যাটারি বিক্রি করতে গিয়ে বাউখণ্ড এলাকার মান্নান নামে এক যুবক সেখানে ধরা পড়েন। এই খবর মেম্বার আশরাফকে মানিকগঞ্জ থেকে দোকানদার ফোন করে জানান। সেই খবর আশরাফ মেম্বার মাটি ব্যবসায়ী আলকেছ মেম্বারকে জানান। আলকেছ মেম্বার সাথে সাথে আলামিন, রতন ও আইয়ুবকে মানিকগঞ্জ পাঠায় চোর ও ব্যাটারি উদ্ধার করার জন্য। পরে আলামিন, রতন ও আইয়ুব মানিকগঞ্জ গিয়ে চোর মান্নানকে আটক ও ব্যাটারি উদ্ধার করে নান্দেশ্বরী গ্রামে নিয়ে আসে। এরপর মান্নানকে জিজ্ঞাসা করলে সে বাউখন্ড গ্রামের মৃত মোন্তাজ উদ্দিনের ছেলে ফজল হকের (ফজু) নাম বলে। সেইসাথে মান্নানের ফোন দিয়ে ফজুকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাস করে কোথায় আছ বললে ফজু বলে আমি বাউখণ্ড গ্রামের গাজী পাথর এলাকায় আছি। তখন আলামিন রতন ও আইয়ুব দ্রুত সেখানে গিয়ে ফজল হক সফজুকে ধরে মারধর করতে করতে নান্দশ্বরী মাদ্রাসার দক্ষিণ পাশে আলামিনের অস্থায়ী অফিসে নিয়ে বেঁধে মারধর করেন এবং কারেন্টে শর্ট দেয়। পরে সেই আবস্থায় ফজুর দুই হাত ভেঙে ফেলে। অবস্থার বেগতিক দেখে বড়নারায়ণপুর গ্রামের মেম্বার মো. আশরাফ আলীকে খবর দিয়ে তার জিম্মায় ফজল হক ফজু ও মান্নানকে ছেড়ে দেয়। পরে ফজল হক বাড়িতে যাওয়ার দুই ঘন্টা পর বমি করতে করতে মারা যায়। অপরদিকে মান্নানকে মুমূর্ষু অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। এবিষয়ে নিহত ফজল হকের মা আছিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে কোনো দিন চুরি করে নাই। আমার ছেলেকে ফাঁসানোর জন্য তার নাম বলেছে। একজন লোকের নাম বললেই কি সে চোর হয়ে যায়। আমার ছেলেকে ভূমিদস্যু মাটি ব্যবসায়ী আলামীন, রতন, আইয়ুব, আলকেছ, মীর হোসেন ও শফিকরা মিলে মারতে মারতে মেরে ফেলেছে। আমি এর বিচার দাবি করছি আইনের কাছে। এই বিষয়ে কাওয়ালীপাড়া তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাতে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের কাজ চলছে। দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।