কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মিত হওয়ার ১ বছর যেতে না যেতেই মসজিদের বিভিন্ন অংশে ফাটলসহ নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে মসজিদ নির্মাণসহ সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে দুর্নীতির মাধ্যমে মসজিদটি নির্মাণকাজ হয়েছে বলে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। প্রাপ্ত সূত্র ও সরেজমিন দেখা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে মডেল মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। এটি উপজেলা চত্বরে প্রায় ৪০ শতক জমির উপরে তৃতীয় তলা মসজিদ। এটির নির্মাণ ব্যয় ছিল সাড়ে ১১ কোটি টাকা। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ বাস্তবায়নে গর্ণপূত বিভাগের আওতায় মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি প্রাক্কলন (নসকা) অনুযায়ী কাজ সমাপ্ত করে প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করেন। সে অনুযায়ী গত বছরের ১৬ মার্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মসজিদের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এটি নির্মাণের ১ বছর যেতে না যেতেই মসজিদটির সিঁড়ির নিচের গোডাউন রুমটির ৭-৮ জায়গায় ফাটল ধরেছে। ফলে চোয়ায় চোয়ায় পানি ঝড়ছে বিল্ডিংএর গা ঘেঁষে। অন্যদিকে মসজিদটির নীচতলার পার্কিং এরিয়ার উপরের ছাদটি পূর্ব পাশে পুরো ছাদের দক্ষিণ থেকে উত্তরদিকে লম্বায় ফেটে গেছে। ফলে পুরো ছাদটি ড্যাম হয়ে গেছে। এটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় পুরো মসজিদটিতে বিদ্যুৎ ওয়ারিংয়ের প্রচুর সমস্যা দেখা দিয়েছে। যেকারণে বিদ্যুতের সুইচ দিলেই স্পার্কিং শুরু হয়ে যায়। এছাড়া নিম্নমানের লাইটিং-এর কারণে বেশির ভাগ বাল্প নিয়মিতভাবে জ্বলে উঠে না। মসজিটির বাইরে প্রটেকশন ওয়াল দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি দেওয়া হয়নি। ফলে মসজিদটির বাইরের অংশ অরক্ষিত। প্রতিনিয়ত কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণী সহজেই প্রবেশ করে অপরিষ্কার করে তোলে। আবার ছাদে পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থা না থাকায় ছাদের উপরে পানি জমে থাকে। ওই জমানো পানি মসজিদের মূল জায়গায় প্রবেশ করায় মুসল্লিরা পবিত্র নামাজ আদায় করতে পারেই না। মসজিদের দজায় ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের গ্লাস। যাহা ভেঙে গেছে সহসাই। প্রতিনিয়ত পানির সমস্যার কারণে ওয়াস রুমসহ ওজুখানায় দুর্গন্ধে প্রবেশ করা কঠিন। মসজিদটিতে ৫টি সোলার প্যানেল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করলেও একটি সম্পূর্ণ ভাবে অকেজো। বাকি ৪টি আজ পর্যন্তও বাল্পের আলো মসজিদে জ্বলে উঠেনি। একথাই মসজিদটি যে উদ্দেশ্য নিয়ে সরকার নির্মাণকাজ তৈরি করেছিল, তা কোন কাজেই আসেনি। তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে পড়বে বলে অনেকে মনে করেন। অন্যদিকে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এলাকার সচেতন মহলও দাবি করেছেন। ফুলবাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো: মজিবর রহমান চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, এজন্য অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দায়ী। এটি নির্মাণের সময় কোন তদারকি ছিল না। আমি তদন্ত করে এই অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করছি। গণপূর্ত অধিদপ্তরের কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্যাহ আল ফারুক মোবাইল ফোনে জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। দু’মাস হলো কুড়িগ্রামে যোগদান করেছি। দ্রুত মসজিদটি ভিজিট করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান এ কর্মকর্তা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেহেনুমা তারান্নুম জানান, আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। কুড়িগ্রাম ২ আসনের (ফুলবাড়ী, রাজারহাট ও কুড়িগ্রাম সদর) জাতীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা: মো: হামিদুল হক খন্দকার জানান, আমি মসজিদটি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি। এটি নির্মাণকাজে যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জানিয়েছি।