ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টাকাই সব উখিয়ার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কাছে

স্থানীয় হওয়ায় দেখান দাপট!
টাকাই সব উখিয়ার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কাছে

স্থানীয় হওয়ার দাপটে দুর্নীতিকে শিল্পে রুপান্তর করেছেন উখিয়া উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আলী আহমদ প্রকাশ আলী আহমদ অনিক। অনৈতিক সুবিধা ছাড়া কোনো ফাইল ছাড় হয় না তার দপ্তর থেকে, যেখানে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারী পর্যন্ত প্রায় সবাইকে বেতন ভাতা, পেনশনসহ সরকারি সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিল উত্তোলন সংক্রান্ত প্রয়োজনে গুনতে হয় বিশাল অঙ্ককের টাকা। একপ্রকার জিম্মি করে নবম গ্রেডের এই কর্মকর্তা (নন ক্যাডার) দাবি করেন ঘুষ, চাহিদা অনুযায়ী যা দিতে ব্যর্থ হলে আপত্তি দাখিল অথবা বিল আটকে রাখাসহ নানা ভাবে হয়রানি করা হয় ভুক্তভোগীদের। ২০০৪ সালের ৮ই নভেম্বর অডিটর হিসেবে যোগদান করে এসএস সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিসেবে ২০১৮ তে এবং এঅ্যান্ডএও ( অডিট এঅ্যান্ড একাউন্টস অফিসার) পদে ২০২১ সালে পদোন্নতি পান আলী আহমদ। তবে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (ইউএও) হিসেবে ২০১৯ সালের ২১ জুলাই উখিয়ায় যোগদান করেন তিনি। আলী আহমদের পৈতৃক নিবাস উখিয়ার রত্মাপালং ইউনিয়নে এবং উখিয়ার সদর রাজাপালং ইউনিয়নে তার শ্বশুড়বাড়ি। ১৯৯৪ সালে উখিয়া বহুমুখী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশের পর উচ্চ শিক্ষার জন্য চট্টগ্রামে চলে যান তিনি, পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে যোগ দেন সরকারি চাকরিতে। অভিযোগ আছে, তদবির ও বিশাল অঙ্ককের ঘুষের মাধ্যমে নিজ উপজেলায় হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হয়ে আসেন তিনি। স্থানীয় হওয়ার কারণে ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না কেউ, নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে কাজের চেয়ে বেশিরভাগ সময়ই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা যায় তাকে। উখিয়ায় যোগদানের দ্বিতীয় বছরেই ২০২১ সালে তাকে বদলির প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিল উপজেলা পরিষদের এক মাসিকসভায়, অদৃশ্য কারণে যা কার্যকর না হওয়ায় পাঁচ বছর ধরে স্বপদে বহাল থেকে তিনি নিজ দপ্তরকে পরিণত করেছেন দুর্নীতির আখড়ায়। অনুসন্ধানে উঠে আসা ঐ সভার নথি বলছে, নিজ বাড়ি উখিয়া উপজেলাতে হওয়ায় বিভিন্ন সময় দাপট দেখিয়ে তিনি দুর্ব্যবহার করেন এবং উপজেলায় কর্মরত বেশিভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক প্রকার জিম্মি করে রেখেছেন। এছাড়াও উঠেছিল হয়রানির পাশাপাশি সরকারি বিল ছাড়ে অসহযোগিতার মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটানোর মতো গুরুতর অভিযোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসনের অন্য একটি গুরত্বপূর্ণ দপ্তরের কর্মকর্তা জানান, ‘অর্থনৈতিক কারণে প্রশাসনের কাঠামোতে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ এখানে তার বাড়ি হওয়ায় তিনি দাপট দেখিয়ে সেই গুরুত্বের অপব্যবহার করছেন, তার কারণে দুটি প্রকল্পের অর্থ হারিয়েছি।’ উখিয়ায় মুল দায়িত্বের পাশাপাশি রামু এবং টেকনাফে বিভিন্ন সময়ে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেও অভিযোগের অন্ত ছিল না তার বিরুদ্ধে। ২০২২ সালে টেকনাফে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের সময় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সেই দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যহতি দেয়া হয় বলে মুঠোফোনে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন তৎকালীন টেকনাফের ইউএনও পারভেজ চৌধুরী। বর্তমানে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা ৩০ তম বিসিএস এর এই কর্মকর্তা জানান, ‘উৎকোচ ছাড়া কাজ করতেন না আলী, অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় তাকে টেকনাফ থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছিল। রামু উপজেলায়ও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, ‘হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার বাড়ি এখানে বলে শুনেছি, তবে তার বিরুদ্ধে সুর্নিদিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে সে অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ অভিযোগ প্রসঙ্গে আলী আহমদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছুটিতে আছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত