কলাগাছের ভেলাই ১০ গ্রামের মানুষের ভরসা

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মো: ইসহাক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ)

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগি ইউনিয়নের বগাপুতা গ্রামে কাঁচামাটিয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির একটি পাটাতন ভেঙে পড়ে আছে নদীতে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন আশপাশের ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।

সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। গত শুক্রবার বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে সেতুটির পূর্বপাশের একটি পাটাতন ভেঙে নদীতে পরে যায়। তখন থেকেই শুরু হয় সীমাহীন ভোগান্তি। বিকল্প রাস্তা না থাকায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কলাগাছের ভেলা দিয়ে নদী পার হচ্ছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, রিবিজটি ভাঙায় খুব বিপদে আছি। ঘরে আনাইজ-পাতি (বাজার-সদাই) নাই, বাজারেও যাইতে পারতাছি না।

সোহাগি ইউনিয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী জিহাদ জানায়, স্কুলে যেতে এখন ভয় লাগে। কলাগাছে ওঠে নদী পার হতে হয়, মনে ভয় লাগে কখন নদীতে পড়ে যাই। ভেলা দিয়ে নদী পার হওয়া আব্দুল বারেক (৭০) ও ইদ্রিস আলী বলেন, পাঁচ টাকা ভাড়া দিয়ে কলাগাছের ভেলা দিয়ে নদী পার হলাম। তারা আরো বলেন, সাহেবনগর, চট্টি, মনোহরপুর, বগাপুতা, ফানুর, মালিয়াটি, নিজতুলন্দরসহ আরো ১০ গ্রামের মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। গোলাপ নামে একজন জানান, অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নেওয়ার কোনো উপায় নাই। একজন নারীর প্রসব বেদনা উঠলে কীভাবে হাসপাতালে নিব বলেন? অটোরিকশা চালাক মামুন মিয়া ও জুয়েল মিয়া বলেন, ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় আমারা এখন গাড়ি নিয়ে বের হতে পারছি না। ঘরে চাউল (চাল) নাই। এখন খাব কি? আমাদের দাবি ব্রিজটি যেন দ্রুত চলাচলের উপযোগী করা হয়।

জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর স্বল্প বায়ে গ্রামীণ সড়কে ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার সোহাগী বাজার হইতে দেওয়ানগঞ্জ বাজার রাস্তায় সাহেব নগর এলাকায় কাঁচামাটিয়া নদীর উপর ৭৫১ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্ত একটি ব্রিজ স্থাপন করা হয় ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে। সোহাগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাদির আহম্মেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি সেতুটি পরিদর্শন করেছি। সীমাহীন দুর্ভোগে আছে ওই এলাকার অনেক মানুষ।

বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তিনি সাময়িক চলাচলের উপযোগী করে তুলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আয়শা আক্তার বলেন, ‘সেতুটির একটি পাটাতন ভেঙে নদীতে পড়ে যাওয়ার বিষয়ে আমরা জেনেছি। এলজিইডি অফিসের একটি প্রতিনিধি দল সেতুটি পরিদর্শনও করে এসেছে। দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন, ‘ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে আমরা খবর পেয়েছি। সাময়িক চলাচলের উপযোগী করে তোলার জন্য আজ থেকে কাজ শুরু করা হবে। আপাতত বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরে স্থায়ীভাবে পুনর্নির্মাণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।