উপকূলে সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্পে অসাধু চক্রের কালো থাবা

জনস্বাস্থ্য বিভাগের একটি বিপথগামী সিন্ডিকেট সুফলভোগী খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লুটে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ইয়ামিন আলী, বাগেরহাট

উপকূলজুড়ে অথৈ পানি তবুও বছরের পর বছর ধরে তীব্র সুপেয় পানির সংকটে লাখো উপকূলবাসী। শুষ্ক মৌসুমে তীব্র তাপপ্রবাহে মানুষগুলোর যখন হাসফাঁস অবস্থা থাকে তখন উপকূলজুড়ে বসবাসকারী খেটে খাওয়া মানুষদের ছুটতে হয় সুপেয় পানির খোঁজে। এ সময় সুপেয় পানির আধার পুকুরগুলোর কোনোটা শুকিয়ে যায়, কোনোটা শুকিয়ে তলানিতে ঠেকে যায়। সুন্দরবনের কোলঘেঁষা উপকূলীয় জেলার শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও জেলার শ্রমঘন উপজেলা মোংলাতে তখন সুপেয় পানির সংকটের তীব্রতা আরো বেড়ে যায়। বাগেরহাট জনস্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্যমতে এই তিনটি উপজেলায় কোনো গভীর নলকূপ বসে না। আর অগভীর নলকূপ অনেক আগেই আর্সেনিকের কারণে ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে গেছে। সুন্দরবন উপকূলের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে বিশাল জনগোষ্ঠীর তীব্র সুপেয় পানির সংকটের বিষয়টি সরকারের নজরে আসে বেশ আগে থেকেই। সাতক্ষিরা, খুলনার কয়রা, পাইকগাছা ও বাগেরহাট জেলার বৃহওর জনগোষ্ঠী যারা সুন্দরবনের নদী খালে মাছ, কাঁকড়া ধরে, কেউ গোলপাতা আহরণ করে, কেউ আবার মধু সংগ্রহ করে জীবিকা নির্ভর করে। এছাড়া আরো একটি অংশ যারা তৈরি পোশাক, ইপিজেড ও জাহাজ শ্রমিক, দিনমজুর, ভ্যান, অটো, নছিমন, ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে ধাপে ধাপে সুপেয় পানির সংকট নিরসনে বেশ কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে শ্রমঘন এলাকা মোংলা, সুন্দরবনের কোলঘেঁষা শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলায় অন্তত ৬টি প্রকল্পের মাধ্যমে লবণাক্ত এলাকায়, পুকুর খনন, রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং, সোলার পিএসএফ, ন্যানো ফিল্টার ও বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য পানির ট্যাংকির মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের সুপেয় পানির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। লবণাক্ত এলাকায় সরকারের নেয়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এলাকায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্প, বিশ্ব ব্যাংক, জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড, খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষিরা পানি সরবরাহ প্রকল্প, মুজিববর্ষ প্রকল্প, বিআর ডব্লিউ এসপি প্রকল্প, সিআর ডব্লিউ এইচ প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু শ্রম ঘন মোংলা উপজেলায় সুপেয় পানি সংরক্ষণে নানা উদ্যোগের সুফল যখন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। ঠিক তখনি জনস্বাস্থ্য বিভাগের একটি বিপথগামী সিন্ডিকেট সুফলভোগী খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা লুটে নিচ্ছে। মোংলা উপজেলার সুন্দরবনের কোলঘেঁষা নানা প্রান্তে সরেজমিন ঘুরে পানি সংরক্ষণের জন্য টেংকি পাওয়া একাধিক সুবিধাভোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে। মোংলা জনস্বাস্থ্য দপ্তরের নৈশপ্রহরী মো. রবিউল ইসলাম ও অফিস সহকারী আব্দুর রাজ্জাক পানির ট্যাংকির গোড়া পাকা করার জন্য কারো কাছ থেকে একশ’ বা দুইশ’ ইট, কারো কাছ থেকে এক বা দুইব্যাগ সিমেন্ট, কারো কাছ থেকে মিস্ত্রি বিল নিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া যারা টেংকিটি পাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের কার্যাদেশে সুফলভোগীর বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গোড়া পাকা করে দেয়ার কথা থাকলেও সুফলভোগীরা সেখান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আর কাগজে-কলমে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নিয়োগ থাকলেও বাস্তবে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন উপসহকারী প্রকৌশলী মোংলার সোহান আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট অভিযোগের বিষয়ে মোংলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের নৈশপ্রহরী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আমার ডিউটি রাতে। তবে অফিসের জরুরি প্রয়োজনে স্যারদের মৌখিক নির্দেশে আমার বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে হয়। আমি নিজে থেকে কোনো দায়িত্ব পালন করি না। অফিস সহকারী আব্দুর রাজ্জাকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। উপসহকারী প্রকৌশলী সোহান আহম্মেদ বলেন, আমি সরকারি দায়িত্ব পালন করি, অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। এটা এক ধরনের গুজবমাত্র। আমার অফিসের কর্মচারীরা সরকারি চাকরিবিধি মেনে তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকে।