শিশুপার্ক নাকি ধু-ধু মরুভূমি?
উপরে ফিটফাট ভেতরে ফাঁকা মাঠ
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মো. মাসুদ রানা মনি রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর)
লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ পৌর এলাকার বাইপাস সড়কের ডাকবাংেলা সংলগ্ন এলাকায় শিশু-কিশোর ও স্থানীয় মানুষদের চিত্ত-বিনোদনের জন্য নির্মিত একমাত্র শিশুপার্কটি এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নোংরা-অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও কোনো ধরনের খেলনা ও রাইডবিহীন এ শিশুপার্কটি এখন মানুষের হাস্যরসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা যায় ২০০৫ ইং সনে সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত জিয়াউল হক জিয়া রামগঞ্জ শিশুপার্কটি প্রতিষ্ঠা করেন। লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ ওই শিশুপার্ক নির্মাণে অর্থায়ন করে। উপজেলার একমাত্র বিনোদনকেন্দ্র রামগঞ্জ শিশুপার্কটি হয়ে উঠে উপজেলাবাসীর প্রাণকেন্দ্র। দূর-দূরান্ত থেকে সব বয়সি মানুষদের পদচারণায় মুখরিত ছিল এলাকাটি। স্থানীয় কিছু লোক শিশুপার্কটি ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখেন। বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে রাতারাতি।
সরকারিভাবে শিশুপার্ক ও প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করার জন্য সরকার যেখানে আন্তরিকভাবে অর্থায়ন করছেন, ঠিক তখনি রামগঞ্জ উপজেলার একমাত্র বিনোদনকেন্দ্র শিশুপার্কটি দীর্ঘদিন পড়ে আছে অযত্নে-অবহেলায়। বিভিন্ন সময় দলীয় সভা-সমাবেশ ও মেলার আয়োজন করার কারণে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রামগঞ্জ শিশুপার্কটি ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে মাদকসেবীরা পার্কটির সকল প্রকার রাইড, খেলনা ও বিভিন্ন মূল্যবান আসবাবপত্র খুলে নিয়ে বিক্রি করে দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারী নেই। নেই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো ব্যবস্থা। পার্কের ভেতরের চারপাশে ঝোপ-জঙ্গল আর ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দিনের বেলায় গরু-ছাগলের চারণ ভূমি, যুবকদের খেলার মাঠ, গাড়ির গ্যারেজ ও রাতে মাদকসেবীদের আড্ডাখানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে পার্কটি। বর্ষাকালে কাদা আর গ্রীষ্মকালে ধুলিবালুতে পার্কটির অবস্থা বেহাল। এছাড়া স্থানীয় লোকজন পার্কটির দেওয়াল ঘেঁষে নির্মাণসামগ্রী, ময়লা-আবর্জনা স্তূপ করে রাখায় ধুলিবালু ও নোংরা পরিবেশ যেন বিষিয়ে তুলছে পার্কটির পরিবেশ। বিভিন্ন সময়ে পার্ক নিয়ে লেখালেখি ও আবেদনে সাড়া দিয়ে জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ মো: শাহজাহান পার্কটি শেখ রাসেল শিশুপার্ক নামে দিয়ে সংস্কার কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তাও কোনো কারণে থমকে আছে। জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৪ অক্টোবর তৎকালীন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মরহুম জিয়াউল হক জিয়া পার্কটি প্রতিষ্ঠার পর পার্কের ভেতরে নির্মাণ করা হয় পাকা বেঞ্চ, দোলনা, লেক-লোহার ব্রিজসহ শিশুদের খেলার সামগ্রী। সেই সঙ্গে পার্কটিতে বিভিন্ন জাতের ফুল-ফল ও কাঠগাছ লাগানো হয়। বর্তমানে পার্কে লাগানো লাখ লাখ টাকার ফুল-ফল ও কাঠগাছগুলোর অস্তিত্ব নেই। পুরো মাঠ এখন বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। বাচ্চাদের জন্য তৈরিকৃত একটা খেলনারও অস্তিত্ব নেই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পার্কটির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। শিশুপার্কটি রক্ষায় স্থানীয় বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সুশীল সমাজ, বিভিন্ন পেশাজীবী লোকজন পার্কটি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ২০২০ ইং সনে পার্কের দেওয়াল কারুকার্য, নতুন তোরণ নির্মাণ ও দুইটি স্থায়ী ড্রাগন নির্মাণ করেন। আশার আলো দেখেন সব শ্রেণি পেশার মানুষ। কিন্তু তাদের এ আনন্দ বেশি দিন থাকেনি।