ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কমেছে আমদানি

আখাউড়া স্থলবন্দরে বেড়েছে রপ্তানি আয়

* প্রতিদিন ২ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় ত্রিপুরায়, চাহিদা বেশি মাছ ও সিমেন্টের * রাজস্ব বাড়লেও ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় কমেছে আমদানি
আখাউড়া স্থলবন্দরে বেড়েছে রপ্তানি আয়

ইতিবাচক ধারায় ফিরছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের পণ্য রপ্তানি বাণিজ্য। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে ৫১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা রপ্তানি আয় বেড়েছে। এছাড়া বেড়েছে রাজস্ব আয়ও। তবে ডলার সংকটসহ নানা কারণে পণ্য আমদানি কমেছে বেড়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ স্থলবন্দর দিয়ে। যদিও চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর তাগিদ সংশ্লিষ্টদের। এজন্য ভারতে নতুন নতুন পণ্যের বাজার তৈরির চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে বাণিজ্য বাড়তে থাকায় ২০১০ সালে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে আখাউড়া স্থলবন্দর। শুরু থেকেই রপ্তানিমুখী স্থলবন্দরটি। বর্তমানে প্রতিদিন হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট, প্লাস্টিক, ভোজ্য তেল, তুলা, ফার্নিচার ও খাদ্যসামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। সেখান থেকে রপ্তানি পণ্য সরবরাহ হয় ত্রিপুরার পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে। বর্তমানে রপ্তানি হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে হিমায়িত মাছ ও সিমেন্ট। প্রতিদিন অন্তত ৪০-৫০ টন পাঙ্গাস, পাবদা ও কাতলসহ দেশিয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এবং প্রায় ৭০ টন সিমেন্ট রপ্তানি হয় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। প্রতিটন মাছের রপ্তানি মূল্য ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। আর প্রতিটন সিমেন্ট রপ্তানি হয় ৮৬ ডলার মূল্যে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয় ত্রিপুরায়। আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৪২৭ কোটি ৮৮ লাখ ৭২ হাজার ৪৩০ টাকার পণ্য। এর বিপরীতে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৭ কোটি ৫ হাজার ২০৩ টাকার পাথর, পেঁয়াজ, আদা ও জিরা। এ থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব পেয়েছে ৪ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৪৬ টাকা। মূলত পাথর আমদানিতে শুল্ক বেশি হওয়ায় রাজস্বের পরিমাণ বেড়েছে। আর বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছিল ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার পণ্য। ওই অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল প্রায় ৬৬ কোটি টাকার পণ্য। এ থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব পায় মাত্র ৫৬ লাখ টাকার মতো। তবে বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব বাড়লেও নানা সংকটে আমদানি কমেছে। চাহিদা মতো সব পণ্য আমদানির অনুমতি না থাকা এবং ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় আমদানি কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যখন যে পণ্যের চাহিদা তৈরি হবে, তখন সেই পণ্য আমদানির সুবিধার্থে স্থলবন্দর দিয়ে সব পণ্য আমদানির অনুমতি চান তারা।

আখাউড়া স্থলবন্দরের কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাসিবুল হাসান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ডলার সংকট চলছে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির জন্য চাহিদামতো এলসি খুলতে পারেননি। এছাড়া আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আনার অনুমতি রয়েছে- তার অধিকাংশেরই আমাদের অঞ্চলে চাহিদা নেই। পলে এগুলো আমদানি করে মুনাফা করা যায়না’। তিনি আরো বলেন, ‘ভারতীয় প্রসাধনী এবং কাপড়ের ভালো বাজার আছে আমাদের এখানে। কিন্তু আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে এ দুটি পণ্য আনার অনুমতি দিচ্ছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এছাড়া চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমরা রপ্তানি বাণিজ্যে বেশি জোর দিচ্ছি। ভারতে নতুন নতুন বাংলাদেশি পণ্যের রাজার তৈরির জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি’। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘ডলার আয়ের লক্ষ্যে বর্তমানে আমদানির চেয়ে রপ্তানি বাণিজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে রপ্তানি পণ্যবোঝাই গাড়িগুলো আমরা দ্রুত ছাড়করণসহ ব্যবসায়ীদের সবধরনের সহযোগিতা দিয়ে থাকে শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষ’। ‘আমদানি নীতিমালা অনুযায়ী অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা থাকে, যেগুলো ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে করে আনতে কিছুটা সময় লাগে। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা আখাউড়ায় না থাকলে আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে সব পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়াটা বাস্তবসম্মত হবে না’- উল্লেখ করেন সহকারী কমিশনার ইমরান হোসেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত