ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দলবেঁধে দুধ বিক্রেতাদের অন্য রকম মিছিল

দলবেঁধে দুধ বিক্রেতাদের অন্য রকম মিছিল

কারো হাতে কলস, কারো হাতে জগ, কেউবা আবার মাথায় নিয়েছে পাতিল। প্রতিদিন সকাল হলেই এমন দৃশ্য দেখা যায়- মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার রাজৈর খেয়াঘাটে। যুবক, বৃদ্ধ, নারী সবার গন্তব্য একটাই গোপালপুরের বাজার। উদ্দেশ্য তাদের গৃহপালিত গরুর দুধ বিক্রি। আর এর জন্যই তারা আসছে নদী পাড়ি দিয়ে। সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন এভাবে দলবেঁধে বিক্রি করতে আসেন তাদের গৃহ পালিত গরুর দুধ।

জানা গেছে, উপজেলার বরাইদ, রাজৈর ও ছনকাসহ আশপাশের ১০টি গ্রামের কৃষকের প্রায় সবার বাড়িতেই রয়েছে একাধিক দুধ দেয়া গাভী। প্রতিদিন সকালে গাভীর দুধ দোয়ানোর পর তা বিক্রির জন্য নিয়ে আসে গোপালপুর বাজারে। দৈনিক এ বাজারে প্রায় দেড় থেকে ২০০ মণ দুধ বিক্রি হয়। ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে এ বাজারে দুধ বিক্রি করেন গাভী পালনকারী কৃষকরা।

সরেজমিন গোপালপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে কেউ আসছে দুধ ভর্তি কলসি মাথায় করে, হাতে বালতি ঝুলিয়ে। বাজারে পৌঁছানোর সাথে সাথে দুধ কিন্তে আসা পাইকাররা তার হাত থেকে দুধের পাত্রটি নিয়ে ডিজিটার মেশিনের দুধের পরিমাণ মেপে দাম দিয়ে দিচ্ছে। দুধ কেনার পর তারা বড় একটি ড্রামে দুধ ঢেলে রেখে গামছা দিয়ে ছাকনি করে প্লাস্টিকের ড্রামে ভর্তি করছে। বাজারে দুধ কিনে শত শত ড্রামে ভরে দুধ নিয়ে যাচ্ছে ভ্যানগাড়ি ও পিকআপে করে। মাত্র আধা ঘণ্টায় শেষ হয়ে যায় দুধের বাজারটি। রাজৈর চরের সাহেদা বেগম (৪৫) বলেন, তার ৪টি গাভী রয়েছে, গাভীগুলো থেকে ২৫ কেজি দুধ হয়। সে ও তার দুই নাতি মিলে দুধ বিক্রি করতে প্রতিদিন ধলেশ্বরী নদীর খেয়া ঘাট পার হয়ে গোপালপুর বাজারে যায়। তার মতো রাজৈর চরের প্রায় তিন শতাধিক কৃষক গোপালপুর বাজারে দুধ বিক্রি করে। বাজারে দুধ বিক্রেতাদের অনেকের দাবি সিন্ডিকেটের কারণে গরু পালনকারী কৃষকরা দুধের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত। পাইকাররা যারা আসে দুধ কিন্তে তারা দাম নির্ধারন করে দেয়। ফলে বিক্রেতারা অসহায়। বাধ্য হয়ে দুধ বিক্রি করেন কম দামে।

দুধ বিক্রি করতে আসা কৃষক রজ্জব আলী (৪০) বলেন, সে ৬ কেজি দুধ নিয়ে এসেছে বিক্রি করতে। বাজারে দুধের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। প্রায় ৫ বছর ধরে এভাবেই দল বেঁধে দুধ বিক্রি করতে আসেন গোপালপুর বাজারে। গ্রামের এত মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে বাজারে আসতে মজাই অন্য রকম। তার সঙ্গে তার গ্রামের যে কয়জন এ বাজারে দুধ বিক্রি করার জন্য আসেন, তারা দুধ বিক্রি করে সে টাকা দিয়ে বাজার থেকেই প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিয়ে যান। স্থানীয় জয়নাল (৫৫) জানায়, প্রতিদিন গোপালপুল বাজারে দেড় থেকে দুইশ মন দুধ বিক্রি হয়। দুধ বাজারটি মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। সকালে দল বেঁধে মানুষ আসে দুধ বিক্রি করতে। দুধ কিনতে আসা পাইকার স্বপন ঘোষ জানায়, কয়েক বছর ধরে সে গোপালপুর বাজার থেকে দুধ কেনে। সে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ মণ দুধ কেনে বাজারটি থেকে। বাজারটিতে দুধের দাম কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা। অন্য জায়গার থেকে দুধে দাম কম নয়, দাবি করে সে বলেন, দুধের কোয়ালিটি ভালো বলে তারা এ বাজার থেকে দুধ কেনেন। সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইমরান হোসেন বলেন, গোপালপুর বাজারে প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে ২০০ মণ দুধ বিক্রি হয়। বর্তমান সময়ে বর্ষা মৌসুমে দুধের দর স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটু কম থাকে। কারণ এ সময় দুধের চাহিদাটা একটু কম থাকে। আর প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে একটি প্রকল্প চালু হচ্ছে, তাতে ওই এলাকার গাভী পালনকারীদের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিতে পারব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত