সাটুরিয়ায় গরুর শরীরে লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ
আতঙ্কে প্রান্তিক কৃষক ও খামারি
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মো. খোকন, সাটুরিয়া প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গরুর শরীরে লাম্পি স্কিন ডিজিজ দেখা দিয়েছে। উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ বা এলএসডি রোগ। গত দুই মাসে উপজেলার ১ থেকে দেড় হাজার গরু আক্রান্ত হয়েছে এ রোগে। এলএসডি রোগে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক গরু এরইমধ্যে মারা গেছে। ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে এ উপজেলায়। আর তাতে খামারি এবং প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ বা এলএসডি রোগ এখন এলাকার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, প্রতি বছরই এই রোগে গরু মারা যাচ্ছে; কিন্তু রোগের প্রতিষেধক বা প্রতিকারে সরকারি উদ্যোগের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের জন্য সহায়তার উদ্যোগও নেই। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক, কৃষকরা বলছে রোগটি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
রোগটির বিষয়ে গরুর মালিক এবং খামারিদের ভাষ্য, শুরুতে গরুর সারা শরীরে বসন্তের মতো গুটি উঠছে। তারপর হাঁটু, গোড়ালি ও গলা ফুলে যায়। গলায় পানি জমে। জ্বর আর প্রচণ্ড ব্যথায় খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয়। অনেক সময় মুখ দিয়ে লালা পড়ে। কেউ সুস্থ গরুকে এ রোগ থেকে রক্ষা করতে আক্রান্ত গরুকে মশারি দিয়ে আলাদা করে রাখছে। কিন্তু এর পরও সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। এদিকে খামারিদের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অফিসের চিকিৎসকদের ডাকলে সাড়া দেন না। আর এলেও তাদের বড় অঙ্কের ফি দিতে হয়। নিরুপায় হয়ে তারা গ্রামের পশু চিকিৎসকদের মাধ্যমে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা করাচ্ছেন। আর গ্রাম্য চিকিৎসকেরা যে যার মতো ওষুধ প্রয়োগ করছেন। এতে অনেক ক্ষেত্রে বিপত্তিও ঘটছে। এ অবস্থায় ঋণ নিয়ে গরু কিনে অনেকে আবার দুশ্চিন্তায় আছেন। এমনও লক্ষ্য করা গেছে, অনেক পরিবারে ১-২টি গরুই একমাত্র সম্পদ। গরু লালন পালনের পর বিক্রি করে অনেকে সংসারের কাজে লাগায়। মেয়ের বিয়েতে খরচ করে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ দেয় আবার কেউবা দুধ বিক্রি করে নিত্যদিনের খরচ বহন করে। অনেকে আবার কিস্তির টাকা পরিশোধও করে। তাই রোগে গরুটি মারা গেলে পড়তে হয় মহাসংকটে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের সকল গ্রামেই লাম্পি স্কিন ডিজিজ আক্রান্ত হয়েছে গরু। এরইমধ্যে গত দুই মাসে মারা গেছে প্রায় শতাধিক গরু। পল্লী পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ভুল চিকিৎসা ও অর্থ অপচয়ের শিকার হলেও মিলছে না কোনো সমাধান।
সরেজমিন উপজেলার কয়েকটি এলাকা গিয়ে দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ কৃষকের গরু ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ আক্রান্ত। এ রোগের প্রতিষেধক না থাকায় অনেককে কবিরাজ ও পল্লী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছে। আক্রান্ত গরুর মালিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে চিকিৎসকরা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। নিম্নমানের ওষুধ দিয়ে খামারিদের সঙ্গে করছে প্রতারণা। অনেক ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসার শিকার হতে হচ্ছে গরু গুলি।
উপজেলার হরগজ পূর্বনগর গ্রামের খালেকুজ্জামান জানায়, তার গ্রামের প্রায় প্রতিটি কৃষকের গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজ এ আক্রান্ত। এ রোগে প্রায় ১৪ থেকে ১৫টি গরু মারা গেছে। তার নিজের গরুও এ রোগে আক্রান্ত, গত এক মাস ধরে তার গরুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলার রৌহা গ্রামের গরুর ব্যবসায়ী মো: শহিদুর ইসলাম বলেন, তার গ্রামে মো. কালুর মিয়ার একটি গরু মারা গেছে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে। ছোট গরু বা বাছুর আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। উপজেলাজুড়ে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে । বর্তমানে এ রোগের কারণে গরুর দাম কম।
বড় পয়লা গ্রামের বিশা মিয়া জানায়, তার নিজের একটি গরু আক্রান্ত হয়েছে। তার প্রতিবেশী মতিয়ার রহমানের ৬টি গরু আক্রান্ত হয়েছে। বিশেষ করে গরুর বাছুর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইমরান হোসেন বলেন, এ রোগ প্রতিরোধের কোনো টিকা নেই। উপজেলায় বেশ কয়েকটি এলাকায় গরু মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। গরু মারা যাওয়ার কারন হচ্ছে, লাম্পি স্কিন ডিজিজ আক্রান্ত হওয়া গরুগুলোকে পল্লী চিকিৎসকরা ভুল চিকিৎসা দিচ্ছে এর কারণে গরুগুলি মারা যাচ্ছে তবে আমরা মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।