বাংলাদেশ ও ভারতকে বিভাজনকারী সীমান্তের ইছামতি নদীর প্রবল জোয়ারের তরে দেবহাটা সীমান্ত এলাকায় বেড়িবাঁধে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে বেড়িবাঁধের কিছু কিছু অংশ নদীগর্ভে ধসে পড়েছে। গত কয়েক দিন ধরে বেড়িবাঁধের এসব অংশে ক্রমশ ফাটলের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। এতে করে যে কোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভাঙনকবলিত এলাকায় বসবাসকারী মানুষরা। ইছামতি নদীর পাড়ে বসবাসকারী বাসিন্দারা জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে সাতক্ষীরার নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তঃসীমান্ত নদী ইছামতির বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণ।
দেবহাটা উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের বিশ্বাসপাড়া, ভাতশালা- কোমরপুর স্লুইসগেট, সুশীলগাতি, দেবাহাটা সদর থেকে বসন্তপুরগামী বেড়িবাঁধ ও নাংলা গাংআটিপাড়াসহ ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে ছোট-বড় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তারা আরো জানান, এর আগে পার্শ্ববর্তী সুশীলগতি, কোমরপুর ও নাংলা এলাকায় সীমান্তের ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছিল।
ইছামতি নদীর পাড়ে বসবাসকারী শহিদুল ইসলাম, রফিকুল, তালেবসহ একাধিক ব্যক্তিরা বলেন, এভাবে বারবার বেড়িবাঁধ ভাঙতে থাকলে বসতবাড়ি হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে সীমান্তের বাসিন্দাদের। বেড়িবাঁধের এসব ভাঙন পয়েন্ট জরুরিভিত্তিতে কংক্রিটের ব্লক, বালুভর্তি বস্তা ডাম্পিংয়ের পাশাপাশি নদী ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন নদী পাড়ের গ্রামগুলোতে বসবাসকারী বাসিন্দারা। তারা বলেন, বাঁধ ভাঙার আগে ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয় না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এলাকার পাউবো কর্তৃপক্ষ বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলেই শুধু ভাঙনকবলিত এলাকায় তা মেরামতের কাজ শুরু করেন।
ভাঙনের আগে থেকে তারা তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। সাতক্ষীরা পাউবোর কিছু অসাধু কর্মকর্তার গাফিলতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে উপকূলের অধিকাংশ এলাকার বেড়িবাঁধের বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক। সময়মতো ভাঙন পয়েন্ট গুলো মেরামত না করায় বর্ষা মৌসুমে অথবা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সামান্য জলোচ্ছ্বাসে এই দুর্বল বেড়িবাঁধগুলো সহজেই ভেঙে জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই সীমান্তের ইছামতি নদীর ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। দেহবাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আল ফেরদৌস আলফা জানান, বর্ষা মৌসুমের শুরুতে জেলার বিভিন্ন নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সীমান্তের ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধের বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি আরও জানান, এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি ভাঙনকবলিত এলাকায় তিনি পরিদর্শন করে বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন। দেবহাটা এলাকায় দায়িত্বরত পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শুভেন্দু বিশ্বাস জানান, এরইমধ্যে আমরা ভাঙন পয়েন্টগুলো পরিদর্শন করেছি। জরুরিভিত্তিতে এসব ভাঙন বেড়িবাঁধগুলো মেরামত করা হবে।