বীজ সিন্ডিকেটের কবলে হারিয়ে যাচ্ছে ‘হরি ধান’ চাষ

প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এম এ কবীর, ঝিনাইদহ

হরি ধান। ঝিনাইদহ তথা সারা বাংলাদেশের মধ্যে আলোচিত ও চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী একটি জাতের নাম। হরিধান নিঃসন্তান হরিপদ কাপালীর উদ্ভাবিত একটি জাত। যে ধান আবিষ্কারে হরিপদ কাপালীকে তুলে ধরা হয়েছে সুউচ্চতায়। বিশ্বের অনেক কৃষি বিজ্ঞানীর নামের পাশে জাত কৃষক হরিপদ কাপালীর নাম উঠে এসেছে। স্কুলের সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য বইতে ছাপা হয়েছে হরিপদ কাপালীর ‘হরি ধান’ আবিষ্কারের তথ্য। অথচ সেই হরি ধান আজ বীজ সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে। অধিক ফলনশীল ও খরা সহিষ্ণু এই ধান এখন আর কৃষকের চাষের তালিকায় নেই। তাদের মাথায় শুধুই বিদেশি বীজ কোম্পানির উচ্চ ফলনশীল ধান চাষের ভাবনা। কৃষকের এই ভাবনা থেকে সময়ের ব্যবধানে হরি ধান মাঠ থেকে হারিয়ে গেছে, এ তথ্য নিয়ে জানা গেছে, হরিধানের চাল মোটা হলেও ভাত সুস্বাদু। এই ধানের গাছ পুষ্ট ও লম্বা হওয়ায় বিচালির দাম অন্যান্য জাতের তুলনায় বেশি। এছাড়া কম সারে ফলে অধিক ফলন। এত গুণ-বৈশিষ্ট্য থাকার পরও ঝিনাইদহ জেলাতে হরিধান চাষ সম্প্রসারণ করা যায়নি। হরি ধানের উদ্ভাবক প্রয়াত কৃষক হরিপদ কাপালি জেলা পর্যায়ের নানা পুরস্কার পেলেও এখনো জাত হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পায়নি হরি ধান। এদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা রতনপুর, মধুহাটি, মামুনশিয়া ও ধোপাবিলা গ্রামের কিছু কৃষক হরি ধান চাষ করছেন। তবে এই ধানের আবাদ সম্প্রসারিত না হওয়ার কারণে হরি ধান ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, বিদেশি বীজ কোম্পানীর বাজার নিয়ন্ত্রণের কারণে সিন্ডিকেটের সাথে পাল্লা দিয়ে বাজারে টিকতে পারেনি হরি ধান। যার ফলে আমাদের এলাকার উদ্ভাবিত হরি ধানের বীজ হারিয়ে যেতে বসেছে। হরিপদ কাপালীর পালিত পুত্র রূপকুমার জানান, হরি ধানের জাতটি বীজকেন্দ্রীক বাজারজাতের কৌশলের কাছে টিকতে পারেনি। উচ্চফলনশীল জাতটি সুকৌশলে একটি মহল বাজার থেকে উঠিয়ে দিয়েছে। প্রথমদিকে এ ধানে কোনো রোগবালাই ধরেনি। কিন্তু জমিতে একই ফসল বারবার চাষ করলে উৎপাদন কমে যায়। সে কারণেই হয়তো কৃষকরা হরি ধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। হরিপদ কাপলীর উদ্ভাবন নিয়ে সাংবাদিক আসিফ কাজল জানান, স্থানীয় একটি পত্রিকায় খবরটি প্রকাশ হলে হৈচৈ পড়ে যায়। এরপর দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব মিডিয়া লুফে নেয় হরিপদ কাপালীর উদ্ভাবনের খবরটি। তিনি আরো জানান, কৃষকের মাঝে হরি ধান চাষ প্রায় হারিয়ে গেছে। এর কারণ বর্তমানে কৃষকদের প্রলুব্ধ করা হচ্ছে বিদেশি হাইব্রিড জাতের ধান বীজের প্রতি।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-এ-নবী জানান, আমি এখানে এসে হরি ধান দেখিনি। তবে পত্র-পত্রিকা মারফত জেনেছি। বর্তমানে যদি এই ধান চাষে কৃষক লাভবান হয় এবং সরকারিভাবে এটার সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করা হয়, তাহলে অবশ্যই আমরা এগিয়ে নেব। এ বিষয়ে কৃষকরা শতভাগ সহয়তা পাবেন। উল্লেখ্য ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সুধাহাটি ইউনিয়নের আসাননগর গ্রামের জাত কৃষক প্রয়াত হরিপদ কাপালি দুই দশক আগে উদ্ভাবন করেন হরি ধান। এই ধান উদ্ভাবনের পর দেশব্যাপী খবরটি ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়।