ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারি বালু লুটের অভিযোগ!

টাঙ্গাইলের ধলেশ্বরী নদী
কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারি বালু লুটের অভিযোগ!

টাঙ্গাইলের নিউ ধলেশ্বরী নদীর কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের বেলটিয়া এলাকায় দরপত্র আহ্বানকৃত পাউবো উত্তোলিত ড্রেজড ম্যাটারিয়াল (বালু) স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ বালুখেকোরা লুট করে বিক্রি করার অভিযোগ ওঠেছে। জানা যায়, যমুনার পেট চিরে বয়ে যাওয়া নিউ ধলেশ্বরী নদীর উৎসমুখের (অফটেক) পাশ থেকে নাব্যতা ফিরিয়ে আনয়নের লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজিং বিভাগ নদীর বালু উত্তোলনের পর বামতীরে বেলটিয়া এলাকায় পাশাপাশি দুটি স্থানে স্তূপ করে রাখে। স্তূপকৃত দুটি লট থেকে একটি লটের (৫২, ৬৮১৬৪.৪৯ ঘনফুট) বালু বিক্রির জন্য উপজেলা ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটারিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটি ৪ জুলাই দরপত্র আহ্বান করে।

দরপত্রের সিডিউল বিক্রির শেষ তারিখ ২৮ জুলাই এবং খোলার তারিখ ৩০ জুলাই নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দরপত্র আহ্বান করার পরই স্তূপীকৃত বালুর একটি স্তূপ থেকে গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আ. হাই আকন্দ, হুমায়ুন কবীর সুমন, আজাহার আলী, ওহাব আলী, আব্দুস সবুর, আব্দুল লতিফরা চেয়ারম্যানের প্রভাব খাটিয়ে দিন ও রাতে ভেকুযন্ত্র দিয়ে ট্রাক ভরে বিক্রি করছে। প্রতিদিন শত শত ট্রাক-ড্রামট্রাকে ভরে লুট করা সরকারি বালু বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে সরকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি আহ্বানকৃত দরপত্র নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

এলাকার কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী জানায়, একটি লটের ৫২, ৬৮১৬৪.৪৯ ঘনফুট বালু উপজেলা ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটারিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। স্থানীয় বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে মূলত: আড়াই টাকা ঘনফুট দামে বালু দরপত্রের মাধ্যমে কিনে নিলেই অপর লটের প্রায় কোটি ঘনফুট বালু ফ্রি পাওয়া যেতে পারে। এ সম্ভাবনা থেকেই অনেকে দরপত্রে অংশগ্রহণ করছেন। নাম প্রকাশ না করে এলাকার কয়েক ব্যক্তি জানায়, ৫২, ৬৮১৬৪.৪৯ ঘনফুট বালুর দরপত্র না পাওয়ার আশঙ্কা থেকে গোহালিয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আ. হাই আকন্দ ও তার সহযোগী বালুখেকোরা এরইমধ্যে ওই লটের বালু লুট করে ট্রাক দিয়ে বিক্রির মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাদের ভয়ে কেউ এ বিষয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। এছাড়া পাউবো’র স্থানীয় কর্মকর্তা বিষয়টি জানলেও প্রতিকারে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানায়, বালু ব্যবসায়ী মো. আ. হাই আকন্দ ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ায় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সরকার দলীয় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং উপজেলা প্রশাসনের সুবিধাভোগীদের সহায়তায় নিউ ধলেশ্বরী নদী এলাকায় অবৈধ বালু ব্যবসা করছেন। নিউ ধলেশ্বরী নদীর দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত টাঙ্গাইল পাউবো’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মফিদুল ইসলাম জানান, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। গতকাল শনিবার (২৭ জুলাই) তিনি জানতে পেরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছেন। গোহালিয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আ. হাই আকন্দ জানান, বেলটিয়া এলাকায় তার দুটি বালু মহল আছে- একটি প্লাস্টারের মোটা বালু, অন্যটি বিটবালু। তিনি সেখান থেকে বালু বিক্রি করে থাকেন। স্তূপকৃত সরকারি বালু তিনি বিক্রি করেন না- উপজেলা ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটারিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটি সেগুলো বিক্রির জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছে।

কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহাদাত হুসেইন জানান, বেলটিয়া এলাকার স্তূপকৃত ৫২, ৬৮১৬৪.৪৯ ঘনফুট বালু বিক্রি করতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র শেষে পুনরায় পরিমাণ নির্ণয় করে দরপত্রদাতাকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। দরপত্র আহ্বানের আগে ওই বালুর অংশ বিশেষ বা পুরো অংশ কেউ বিক্রি করে থাকলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, নদীর বালু পানি উন্নয়ন বোর্ড অথবা অন্য যেকোনো ব্যক্তিই উত্তোলন করুন না কেন- তা সরকারি সম্পদ। নদীর উত্তোলিত ড্রেজড ম্যাটারিয়াল পরিমাপ করে নিলামে বিক্রি করা হয়ে থাকে।

তিনি আরো জানান, এ বছর পাউবো টাঙ্গাইল কোন খনন কাজ করেনি। তবে গতবছর পাউবো নারায়ণগঞ্জের ড্রেজিং বিভাগ নিউ ধলেশ্বরী নদীর নাব্যতার জন্য ড্রেজিং করেছিল- যা কালিহাতী উপজেলা ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটারিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা ওই ম্যাটারিয়াল টেন্ডারে বিক্রি করার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত